অর্জুন উবাচ
সন্নাসম্ কর্মনাম্ কৃষ্ণ পুনঃ যোগম্ চ
শংসসি ।
যত্ শ্রেয়ঃ এতয়ো একম্ তত্
মে ব্রুহি সুনিশ্চিতম্ ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন হে কৃষ্ণ প্রথম
তুমি আমাকে কর্ম ত্যাগ
করতে বললে,এবং তারপর কর্তব্য
কর্মের অনুষ্ঠান করতে বললে। এই
দুটির মধ্যে কোনটি অধিকতর
কল্যানকর তা সুনিশ্চিত
ভাবে আমাকে বল।
ভগবান উবাচ
সন্ন্যাসঃকর্মযোগঃ চ
নিঃশ্রেয়সকরৌ উভৌ ।
তয়ো তু কর্মসন্ন্যাসাত্
কর্মযোগঃ বিশিষ্যতে ।।২
অর্থ-ভগবান বললেন-কর্ম ত্যাগ
এবং কর্ম-যোগ উভয়েই
মুক্তি দায়ক। এই দুটির
মধ্যে কর্মযোগ কর্মসন্নাস
থেকে শ্রেয়।
জ্ঞেয় সঃ নিত্য সন্নাসী যঃ ন
দেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি ।
নির্দ্ধন্ধঃ মহাবাহো সুখম্
বন্ধাত্ প্রমুচ্যতে ।।৩
অর্থ- হে মহাবাহো যিনি নির্দ্ধন্ধ
এবং কর্মফলের
প্রতি আকাঙ্খা করে না তিনিই
নিত্য সন্নাসী তিনিই পরম
সুখে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ
করে।
সাংখ্য যোগৌ পৃথক
বালাঃ প্রবদন্তি ন
পন্ডিতাঃ ।
একম্ অপি আস্থিতঃ সম্যক
উভয়োঃ বিন্দতে ফলম ।।৪
অর্থ- মুর্খেরাই কেবল কর্মযোগ
সাংখ্য যোগ পৃথক বলে মনে করে।
পন্ডিতেরা তা বলে না।
সাংখ্যযোগ বা কর্মযোগ
যেটাকেই সুন্দও রুপে আচরন কর
তাতেই উভয়ে উভয়ের ফল লাভ
করতে পারবে।
যত্ সাঃ খ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তত্
যোগৈঃ অপি গম্যতে।
একম্ সাংখ্যম্ চ যোগম্ চ
যঃ পশ্যতি সঃ পশ্যতি ।।৫
অর্থ-যিনি জানেন কর্ম
ত্যাগের মাধ্যমে যে গতী লাভ
হয়,কর্মযোগের দ্বারাও সেই
গতি প্রাপ্ত হওয়া যায়,
এবং তাই যিনি কর্ম
যোগ ও কর্ম ত্যাকে এক
বলে জানেন তিনিই যথার্থ
তত্তদ্রষ্টা।
সন্নাসঃ তু মহাবাহো দুঃখম্
আপ্তুম্ অযোগতঃ ।
যোগযুক্তঃ মুনি ব্রহ্ম ন চিরেন
অধিগচ্ছতি ।।৬
অর্থ-হে মহাবাহো কর্মযোগ
ব্যতীত কেবল কর্ম ত্যাগরুপ সন্নাস
দুঃখ জনক,যোগ যুক্ত মানুষ
অচিরেই পরম গতী লাভ করে।
যোগযুক্তঃ বিশুদ্ধত্মা বিজিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ ।
সর্বভূতাত্মা ভূতাত্মা কুর্বন্নপি ন
লিপ্যতে ।।৭
অর্থ-যোগযুক্ত জ্ঞানি ত্রিবিধ
বিশুদ্ধ বুদ্ধি বিশুদ্ধ চিত্ত
এবং জিতেন্দ্রিয়। তারা সমস্ত
জীবের অনুরাগভাজন হয়ে সমস্ত
কর্ম করেও লিপ্ত হয় না।
ন এব কিঞ্চিত্ করোমি ইতি যুক্ত
মন্যেতে তত্ত্ববিত্ ।
পশ্যন শূন্বন স্পৃশন জিঘ্রন অশ্নন গ্চ্ছন
স্বপন শ্বসন ।।৮
প্রলপন বিসৃজন গৃহ্নন উন্মিষন
নিমিষন অপি ।
ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেষু
বর্তন্তে ইতি ধারয়ন ।।৯
অর্থ-চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত
ব্যক্তি দর্শন শ্রবন স্পর্শ ঘ্রান
ভোজন গমন নিদ্রা ও
নিশ্বাষ,আদিক্রিয়া করেও
সর্বদা জানেন যে প্রকৃত
পক্ষে কিছুই করছেন না। কারন
প্রলাপ, দ্রব্য ত্যাগ, দ্রব্য গ্রহন,
চক্ষুর উন্মেষ এবং নিমেষ করার
সময় তিনি সব সময় জানেন যে,
জড় ইন্দ্রিয়গুলিই কেবল
ইন্দ্রিয়ের বিষয় প্রবৃত্ত হয়েছে,
তিনি নিজে কিছুই করছে না।
ব্রহ্মণি আধায় কর্মাণি সঙ্গম্
ত্যত্ত্বা করোতি যঃ ।
লিপ্যতে ন সঃ পাপেন পদ্মপত্রম্
ইব অম্ভসা ।।১০
অর্থ-যিনি আসক্ত হয়ে কর্ম করেন
এবং কর্মের সমস্থ ফল পরমেশ্বর
ভগবানকে অর্পন করেন, কোন
পাপ তাকে স্পর্শ
করতে পারে না ঠিক যেমন জল
পদ্মপাতাকে স্পর্শ
করতে পারে না।
কায়েন মনসা বুদ্ধা কেবলৈঃ ইন্দ্রিয়ৈ অপি ।
যোগিনঃ কর্ম কুর্বন্তি সঙ্গম্
ত্যক্তা আত্ম শুদ্ধয়ে ।।১১
অর্থ-আত্ম শুদ্ধির জন্য
যোগিরা কর্ম ফলের
আসক্তি ত্যাগকরে। দেহ মন
বুদ্ধি এমনকি ইন্দ্রিয় দ্বারাও
কর্ম করে।
যুক্তঃ কর্মফল ত্যাক্তা শান্তিম্
আপ্নোতি নৈষ্টিকীম্ ।
অযুক্তঃ কাম্ কারেন
ফলে সক্তঃ নিবধ্যতে ।।১২
অর্থ-যোগী কর্মফল ত্যাগ
করে নৈষ্টিক শান্তি লাভ
করেন কিন্তু সকাম
কর্মি কর্মফলের প্রতি আসক্ত
হয়ে কর্ম করার ফলে কর্মের
বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
সর্ব কর্মানি মনসা সংনস্য
আস্তে সুখম্ বশী ।
নবদ্বারে পুরে দেহী ন এব কুর্বন ন
কারয়ন ।।১৩
অর্থ-বাহ্যে সমস্ত কার্য্য করেও
মনের দ্বারা সমস্ত কার্য্য ত্যাগ
করে জীব নবদ্বার বিশিষ্ট
দেহরুপ গৃহে পরম সুখে বাস
করতে থাকেন,তিনি নিজেও
কিছু করেন না এবং কাউকে দিয়েও কিছু
করান না।
ন কর্তৃত্বম ন কর্মানি লোকস্য
সৃজতি প্রভূ ।
ন কর্মফল সংযোগম্ স্বভাবঃ তু
প্রবর্ততে ।।১৪
অর্থ-দেহরুপ নগরীর প্রভূ জীব,
কর্মসৃষ্টি করে না,
সে কাউকে দিয়ে কিছু করান
না বিভূএবং সে কর্মের ফল
সৃষ্টি করে না এই সবই হয়
জড়া প্রকৃতির গুনের প্রভাবে।
ন আদত্তে কস্যচিত্ পাপম্ চ এব
সুকৃতম্ ।
অজ্ঞানেন আবৃতম্ জ্ঞানম্ তেন
মুহ্যতি জন্তবঃ ।।১৫
অর্থ-ভগবান জীবের পাপ
এবং পুন্য কিছুই গ্রহন করেন না।
অজ্ঞানের দ্বারা আবৃত হওয়ার
ফলে জীবসত্তা এই প্রকৃত জ্ঞান
সম্পর্কে মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকে।
জ্ঞনেন তু তত্ অজ্ঞানম্ যেষাম্
নাশিতম্ আত্মনঃ ।
তেষাম্ আদিত্যবত্ জ্ঞানম্
প্রকাশয়তি তত্ পরম্ ।১৬।
অর্থ-জ্ঞানের প্রভাবে যখন
অজ্ঞান বিনষ্ট হয় তখন তার
কাছে সব কিছু যথাযথ
ভাবে প্রকাশিত হয়; ঠিক যেমন
দিন মানে সুর্যের উদয়ে সব কিছু
প্রকাশিত হয়।
তদ্বুদ্ধয়
তদাত্মনঃ তন্নিষ্ঠাঃ তত্পরায়নাঃ ।
গচ্ছন্তি অপুনরা বৃত্তিম জ্ঞান
নির্ধুত কল্মষাঃ ।।১৭
অর্থ-যার বুদ্ধি ভগবানের
প্রতি উন্মুখ হয়েছে মন ভগবানের
চিন্তায় একাগ্র হয়েছে,
নিষ্টা ভগবানে দৃঢ়
হয়েছে,এবং যিনি ভগবানকে তার
একমাত্র আশ্রয় বলে গ্রহন
করেছেন,জ্ঞানের দ্বারা তার
সমস্ত কলুষ সম্পুর্নরুপে বিধৌত
হয়েছে এবং তিনি জন্ম মৃত্যুর
বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছে।
বিদ্যা বিনয়
সম্পন্নে ব্রহ্মনে গবি হস্তিনি ।
শুনি চ এব শ্বপাকে চ
পন্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ।।১৮
অর্থ-যথার্থ জ্ঞানবান পন্ডিত
বিদ্যাবিনয় সম্পন্ন ব্রাহ্মন
গাভী হস্তি,কুকুর ও চন্ডাল
সকলের প্রতি সমদর্শি হয়।
ইহ এব তৈঃ জিতঃ সর্গ যেষাম্
সাম্যে স্থিতম্ মনঃ ।
নির্দোশম হি সমম ব্রহ্ম তস্মাত্
ব্রহ্মনি তে স্থিতাঃ ।।১৯
অর্থ-যাদের মন সাম্যে অবস্থিত
হয়েছে তারা ইহ লোকেই
সংসার জয় করেছেন।
তারা ব্রহ্মের মতো নির্দোশ।
তারা ব্রহ্মতেই অবস্থিত
হয়ে আছে।
প্রহৃষ্যেত্ প্রিয়ম প্রাপ্য ন
উদ্ধিজেত্ প্রাপ্য চ অপ্রিয়ম ।
স্থির বুদ্ধি অসংমুঢ় ব্রহ্মবিদ
ব্রহ্মনি স্থিত ।।২০
অর্থ-যে ব্যক্তি প্রিয় বস্তুর
প্রাপ্তিতে উত্ফুল্য হয়
না এবং অপ্রিয় বস্তুর
প্রাপ্তিতেও বিচলিত হয়
না,যিনি স্থিরবুদ্ধি মোহশুন্য
এবং ভগবত্
তত্ত্ববেত্তা তিনি ব্রহ্মতেই
অবস্থিত রয়েছে।
বাহ্যস্পর্শেষু
অসক্তত্মা বিন্দতি আত্মনি যত্
সুখম্ ।
সঃ ব্রহ্ম যোগযুক্তত্মা সুখম্ অক্ষরম
অশ্নুতে ।২১।
অর্থ-সেই ব্রহ্মবিদ পুরুষ কোন রকম
জড় ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের
প্রতি আকৃষ্ট হন না,
তিনি চিত্জগত্ সুখ লাভ করেন।
ব্রহ্মে যোগযুক্ত
হয়ে তিনি অক্ষয় সুখ ভোগ করেন।
যে হি সংস্পর্শেজাঃ ভোগাঃ দুঃখ
যোনয়ঃ এব তে ।
আদি অন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন
তেষু রমতে বুধঃ ।।২২
অর্থ-বিবেকবান পুরুষ
ইন্দ্রিয়জাত দুঃখজনক বিষয়
ভোগে আসক্ত হন না।
হে কৌন্তেয় এই ধরনের সুখ-ভোগ
উত্পত্তি হয় এবং বিনাশশীল।
তাই বুদ্ধিমান
ব্যক্তিরা তাতে প্রীতি লাভ
করেন না।
শক্নোতি ইহৈব যঃ সোঢুম্ প্রাক
শরির বিমোক্ষণাত্ ।
কাম ক্রোধ উদ্ভবম্ বেগম্
সঃ যুক্তঃ সঃ সুখী নরঃ ।।২৩
অর্থ-এই দেহ ত্যাগ করার
পুর্বে যিনি কাম ক্রোধ
ইত্যাতির বেগ সহ্য করতে সক্ষম
হন, তিনিই যোগী এবং এই
জগতে তিনিই সুখী হন।।
যঃ অন্তঃ-
সুখঃ অন্তরারামঃ তথা অন্তর্জোতিঃ এব
যঃ ।
সঃযোগী ব্রহ্ম নির্বানম্
ব্রহ্মভূতঃ অধিগচ্ছতি ।।২৪
অর্থ-যিনি আত্মাতেই সুখ অনুভব
করেন যিনি আত্মাতেই
ক্রীড়াযুক্ত এবং আত্মজ্ঞানের
আলোকে উদ্ভাসিত তিনিই
যোগী এবং তিনিই ব্রহ্ম
নির্বান লাভ করেন।
লভন্তে ব্রহ্মনির্বানম ঋষয় ক্ষীন
কল্মষাঃ ।
ছিন্ন
দ্বৈধাঃ যতাত্মনঃ সর্বভূত
হিতে রতাঃ ।।২৫
অর্থ-সংযত চিত্তে সমস্ত
জীবের কল্যানেরত এবং সংশয়
রহিত নিস্পাপ ঋষীগন ব্রহ্ম
নির্বান লাভ করে।
কাম ক্রোধ বিমুক্তানাম্
যতীনাম্ যতচেতসাম্ ।
অভিতঃ ব্রহ্ম নির্বানম্
বর্ততে বিদিতাত্মনাম্ ।।২৬
অর্থ-কাম ক্রোধ শুন্য সংযত চিত্ত
আত্মতত্ত্ব সন্নাসিরা অচিরেই
ব্রহ্ম লাভ করেন।
স্পর্শান কৃত্বা বহিঃ বাহ্যান
চক্ষুঃ চ এব অন্তরে ভ্রুবোঃ ।
প্রাণাপাণৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তর
চারিনৌ ।।২৭
যত ইন্দ্রিয় মনঃ বুদ্ধি মুনি মোক্ষ
পরায়ণঃ ।
বিগত ইচ্ছা ভয়
ক্রোধঃ যঃ সদা মুক্তঃ এব
সঃ ।।২৮
অর্থ-মন থেকে বাহ্যজ্ঞান
প্রত্যাহার করে,ভ্রুযুগলের
মধ্যে দৃষ্টি স্থির করে,
নাসিকার মধ্যে বিচরনশীল
প্রান ও অপান বায়ুর উর্দ্ধ ও
অধোগতি রোধ করে, ইন্দ্রিয় মন
ও বুদ্ধি সংযম করে ভয় ও ক্রোধ
শুন্য হয়ে যে মুনি সর্বদা বিরাজ
করেন,তিনিই
নিশ্চিতভাবে জীবন্মুক্ত।।
ভোক্তারম যজ্ঞ তপষাম সর্বলোক
মহেশ্বরম্ ।
সুহৃদম্ সর্বভূতানাম্ জ্ঞাত্বা মাম্
শান্তিম্ ঋচ্ছতি ।।২৯
অর্থ-আমাকে সমস্ত যজ্ঞ
এবং তপস্যার পরম
উদ্দেশ্যরুপে জেনে সর্বলোকের
মহেশ্বর এবং সকলের
উপকারি সুহৃদরুপে আমাকে জেনে যোগীরা জড়জগতের
দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত
হয়ে শান্তি লাভ করে।
No comments:
Post a Comment