Thursday, 10 November 2016

ষষ্ঠ অধ্যায়:- অভ্যাস যোগ



ভগবান উবাচ
অনাশ্রিতঃ কর্মফলম্ কার্যম্ করতি যঃ ॥
সঃ সন্নাসী চ যোগী চ নিরগ্নি ন চ অক্রিয়ঃ ॥১॥
অর্থ-ভগবান বললেন-যিনি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন তিনি সন্নাসী বা যোগীনন,যিনি কোন রকম ফলের আশা না করে তার কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্নাসী বা যোগী।

যম্ সন্নাসম্ ইতি প্রাহুঃ যোগম্ তম্ পান্ডব ॥
ন হি অসংন্যস্ত সংকল্পঃ যোগী ভবতী কশ্চন ॥২॥
অর্থ-হে পান্ডব যাকে সন্নাস বলা যায় তাকেই যোগ বলা যায় কারন ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনো যোগী হওয়া যায় না।

আরুরুক্ষোঃ মুনেঃ যোগম কর্ম কারনম্ উচ্যতে ॥
যোগ আরুঢ়স্য তস্য এব শমঃ কারনম্ উচ্যতে ॥৩॥
অর্থ-অষ্টাংঙ্গ যোগ অনুষ্ঠানে যারা নবীন তাদের পক্ষে নিস্কাম কর্ম অনুষ্ঠান করাই উত্কৃষ্ট সাধন, আর যারা ইতিমধ্যে যোগরুঢ় হয়েছেন তাদেও পক্ষে সমস্ত কর্ম থেকে নিবৃত্তিই উত্কৃষ্ট সাধন।

যদা হি ন ইন্দ্রিয়ার্থেষু ন কর্মসু অনুসজ্জতে ॥
সর্ব সঙ্কল্প সন্নাসী যোগরুঢ় তদা উচ্যতে ॥৪॥
অর্থ-যখন যোগীর জড়সুখ ভোগের সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে ইন্দ্রিয় ভোগ্য বিষয়ের প্রতি আসক্ত রহিত হন তখন তারে যোগরুর বলা হয়।

আত্মনা আত্মনম্ ন আত্মনম অবসাদয়েত্ ॥
আত্মা এব হি আত্মন বন্ধু আত্মা এব রিপুঃ আত্মনঃ ॥৫॥
অর্থ-মানুষের কর্তব্য তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেকে উদ্ধার করা,মনের দ্বারা আত্মাকে অধোপাতিত করা কখনো উচিত্ নয়।মন জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়।
বন্ধু আত্মা আত্মনঃ তস্য যেন আত্মা এব আত্মনা জিতঃ ॥
অনাত্মনঃ তু শত্রুত্বে বর্তেত আত্বৈব শত্রুবত্ ॥৬॥
অর্থ-যিনি তার মনকে জয় করেছে তার মন তার পরম বন্ধু কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম তার মন তার পরম শত্রু।
জিতাত্মনঃ প্রশান্তস্য পরমাত্মা সমাহিতঃ ॥
শীত উষ্ণ সুখ-দুঃখেষু তথা মান অপোমানয়ো ॥৭॥
অর্থ- জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্ত যোগরুঢ় ব্যক্তি পরমার্থকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি শীত ও উষ্ণ সুখ দুঃখ্যে এবং সন্মান অপমানে অবিচালিত থাকেন।

জ্ঞান বিজ্ঞান তৃপ্ত আত্মা কুটস্থঃ বিজিতেন্দ্রিয়ঃ ॥
যুক্ত ইতি উচ্যতে যোগী সমলোষ্ট্র অশ্ম কাঞ্চনঃ ॥৮॥
অর্থ-যে যোগী শাস্ত্রজ্ঞান ও তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত,যিনি শীত উষ্ণ আদি দন্ধে নির্বিকার ও জিতেদ্রিয় এবং যিনি মৃতখন্ড প্রস্তর ও সুবর্ণে সর্বদর্শি তিনি যোগরুঢ় বলে কথিত হন।

সুহৃত্ মিত্র অরি উদাসীন মধ্যস্ত দ্বেষ্য বন্ধুষু ॥
সাধুষু অপি চ পাপেষু সমবুদ্ধিঃ বিশিষ্যতে ॥৯॥

অর্থ-যিনি সহৃত্ মিত্র শত্রু উদাসিন মধ্যস্ত মত্সর বন্ধু ধার্মিক ও পাপাচারি এবং সকলের প্রতি সমবুদ্ধি তিনিই শ্রেষ্ঠতা লাভ করেন।

যোগী যুঞ্জিত সততম আত্মানাম রহসি স্থিতঃ ॥
একাকী যতচিত্তাত্মা নিরাশীঃ অপরিগ্রাহঃ ॥১০॥

অর্থ-যোগরুঢ় ব্যক্তি সর্বদা একান্তে অবস্থিত হয়ে মনকে সমাধিযুক্ত করবেন।অসত্ পরিগ্রহ বর্জন করবেন এবং ফলাকাঙ্খা শূন্য হবেন।

শুচৌ দেশে প্রতিষ্ঠপ্য স্থিরম আসনম্ আত্মনঃ ॥
ন অতি উচ্ছ্রিতম্ ন অতি নীচম্ চেলাজিন কুশত্তরম ॥১১॥

অত্র একাগ্রম মনঃ কৃত্বা যতচিত্ত ইন্দ্রিয় ক্রিয়ঃ ॥
উপবিশ্য আসনে যুঞ্জাত্ যোগম আত্ম বিশুদ্ধয়ে ॥১২॥
অর্থ-যোগ আসনের নিয়ম এই যে কুশাষনের উপর মৃগচর্মের আসন তার উপরে বস্ত্রাশন রেখে অত্যন্ত উচু বা অত্যন্ত নিচু না করে সেই আসন বিশুদ্ধ ভূমিতে স্থাপন করে তাতে আসিন হবেন।সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত ইন্দ্রিয় ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য মনকে একাগ্র করে যোগ অভ্যাষ করবেন।

সমম্ কায়শির গ্রীবম্ ধারয়ন অচলম্ স্থির ॥
সংপ্রেক্ষ্য নাসিকাগ্রম স্বম্ দিশঃ চ অনবলোকয়ন ॥১৩॥

প্রশান্ত আত্মা বিগতভী ব্রহ্মচারিব্রতে স্থিতঃ ॥
মনঃ সংযম্য মত্ চিত্তঃ যুক্তঃ আসিত মত্ পরঃ ॥১৪॥
অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

যুঞ্জন এবম সদা আত্মনাম্ যোগী নিয়ত মানসঃ
শান্তিম্ নির্বান পরমাম্ মত্সংস্থাম্ অধিগচ্ছতি।।১৫
অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

যুঞ্জন এবম সদা আত্মনাম্ যোগী নিয়ত মানসঃ
শান্তিম্ নির্বান পরমাম্ মত্সংস্থাম্ অধিগচ্ছতি।।১৫
অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

যুক্ত আহার বিহারস্য যুক্ত চেষ্টস্য কর্মষু ॥
যুক্ত স্বপ্নাববোধস্য যোগঃ ভবতী দুঃখহা ॥১৭॥
অর্থ-যিনি পরিমিত আহার বিহার করেন পরিমিত প্রয়াস করেন যার নিদ্রা জাগরন নিয়মিত তিনিই যোগ অভ্যাসের দ্বারা সমস্ত জড় জাগতিক দুঃখের নিবৃত্তি সাধন করতে পারেন।
যদা বিনিয়তম্ চিত্তম আত্মনি এব অবতিষ্ঠতে ॥
নিস্পৃহঃ সর্ব কামেভ্যঃ যুক্তঃ ইতি উচ্যতে তদা ॥১৮
অর্থ-যোগী যখন অনুশিলনের দ্বারা চিত্তবৃত্তির নিরোধ করেন এবংসমস্ত জড় কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মাতে অবস্থান করে তখন তিনি যোগযুক্ত হয়েছে বলা হয়।

যথা দীপঃ নিবাতস্থঃ ন ইঙ্গতে সেপমা স্মৃতা ॥
যেগীনঃ যত চিত্তস্য যুঞ্জতঃ যোগম্ আত্মনঃ ॥১৯॥
অর্থ-বায়ু শুন্য স্থানে দীপ শিখা যেমন কম্পিত হয় না চিত্ত-বৃত্তির নিরোধ অভ্যাস কারি যোগীর চিত্তও তেমনই ভাবে অবিচালিত থাকে।

যত্র উপর মতে চিত্তম্ নিরুদ্ধম্ যোগ সেবয়া ॥
যত্র চ এব আত্মনা আত্মনম্ পশ্যন আত্মনি তুষ্যতি ॥২০॥

সুখম্ আত্মন্তিকম্ যত্ তত্ বুদ্ধি গ্রাহ্যম্ অতিন্দ্রিয়ম ॥
বেত্তি যত্র ন চ এব অয়ম্ স্থিতঃ চলতি তত্ত্বতঃ ॥২১॥

যম লব্ধা চ অপরম্ লাভম্ মন্যতে ন অধিকম ততঃ ॥
যস্মিন স্থিতঃ ন দুঃখেন গুরুনা অপি বিচাল্যতে ॥২২॥
তম্ বিদ্যাত্ দুঃখ সংযোগ বিয়োগম্ যোগ-সংজ্ঞিতম্ ॥২৩॥
অর্থ-যোগ অভ্যাসের ফলে যে অবস্থায় চিত্ত সম্পুর্ন রুপে জড় বিষয় থেকে প্রত্যহৃত হয়,সেই অবস্থাকে যোগ সমাধি বলা হয়।এই অবস্থায় শুদ্ধ অন্তকরন দ্বারা আত্মাকে উপলব্ধি করে যোগী পরম আনন্দ আস্বাদন করে। সেই আনন্দ অবস্থায় অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অপ্রাকৃত সুখ অনুভব হয়। এই পরমার্থিক চেতনায় অবস্থিত বলে যেগী আর আত্মতত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হন না,এবং তখন আর অন্য কিছূ লাভই এর থেকে অধিক বলে মনে হয় না। এই অবস্থায় স্থিত হলে চরম বিপর্যয়েও চিত্ত বিচলিত হয় না।জড় জগতের সংযোগজনিত সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা থেকে এটিই হচ্ছে প্রকৃত মুক্তি।

সঃ নিশ্চয়েন যোক্তব্যঃ যোগঃ অনির্বিন্ন চেতসা ॥
সংকল্প প্রভবান কামান ত্যক্তা সর্বান অশেষতঃ ॥
মনসা এব ইন্দ্রিয় গ্রামম্ বিনিয়ম্য সমন্ততঃ ॥২৪॥
অর্থ-অবিচালিত অধ্যবসায় এবং বিশ্বাষ সহকারে এই যোগ অনুশিলন করা উচিত সংকল্প জাত সমস্ত কামনা সম্পুর্ন রুপে ত্যাগ করে মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সর্বদিক থেকে নিবৃত্ত করা কর্তব্য।
শনৈঃ শনৈঃ উপরমেত্ বুদ্ধ্যা ধৃতি গৃহীতয়া ॥
আত্ম-সংস্থম্ মনঃ কৃত্বা ন কিঞ্চিদপি চিন্তয়েত্ ॥২৫॥
অর্থ-ধৈর্যযুক্ত বুদ্ধি দ্বারা মনকে ধীরে ধীরে নিবৃত্ত করে এবং কিছু চিন্তা না করে সমাধিস্থ হতে হয়।
যতঃ যতঃ নিশ্চলতি মনঃ চঞ্চলম্ অস্থিরম্ ॥
ততঃ ততঃ নিয়ম্য এতত্ আত্মনি এব বশম্ নয়েত্ ॥২৬॥
অর্থ-যোগী তার চঞ্চল ও অস্থির মন যে বিষয় ধাবিত হয় সেই সেই বিষয়ে থেকে নিবৃত্ত করে আত্মাতে স্থির করবেন।

প্রশান্ত মনসম হি এনম্ যোগিনম্ সুখম্ উত্তমম্ ॥
উপৈতি শান্ত রজসম্ ব্রহ্মভূতম্ অকল্মসম্ ॥২৭॥
অর্থ-ব্রহ্মভূত অবস্থায় প্রশান্ত চিত্ত,রজ বৃত্তি রহিত এবং নিস্পাপ হয়ে যার মন আমাতে নিবিষ্ট হয়েছে তিনিই পরম সুখ প্রাপ্ত হয়।

যুঞ্জন এবম্ সদা আত্মানম্ যোগী বিগত কল্মষঃ ॥
সুখেন ব্রহ্ম সংস্পর্শম অত্যন্তম সুখম অশ্নুতে ॥২৮॥
অর্থ-এইভাবে আত্মসংযমী যোগী জড় জগতে সমস্থ কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্ম সংস্পর্শরুপ পরম সুখ আস্বাদনকরেন।

সর্ব ভূতস্থম্ আত্মানম সর্ব ভুতানি চ আত্মনি ॥
ঈক্ষতে যোগ যুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥২৯॥
অর্থ-প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করে এবং আমাতে সব কিছু দর্শন করেন।যোগযুক্ত আত্মা সর্বত্রই আমাকেই দর্শন করেন।

যঃ মাম্ পশ্যতি সর্বত্র সর্বম্ চ ময়ি পশ্যতি ॥
তস্য অহম্ ন প্রনশ্যামি সঃ ট মে ন প্রনশ্যতি ॥৩০॥
অর্থ-যিনি সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতেই সমস্ত কিছু বস্তু দর্শন করেন আমি কখনো তার দৃষ্টির অগোচর হই না এবং তিনি ও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না।

সর্বভূত স্থীতম্ যঃ মাম ভজতী একত্তম্ আস্থিতঃ ॥
সর্বথা বর্ত্তমানঃ অপি সঃ যোগী ময়ি বর্ততে ॥৩১॥
অর্থ-যে যোগী সর্বভূতে সংস্থাপিত পরমত্মারুপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন তিনি সর্ব অবস্থাতেই আমাতেই অবস্থান করেন।

আত্ম ঔপম্যেন সর্বত্র সমম্ পশ্যতি যঃ অর্জুন ॥
সুখম্ বা যদি বা দুঃখম্ সঃ যোগী পরমঃ মতঃ ॥৩২॥

অর্থ-হে অর্জুন যিনি সমস্থ জীবের সুখ ও দুঃখকে নিজের সুখ-দুঃখ বলে মনে করেন আমার মতে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী।
অর্জুন উবাচ
যঃ অয়ম্ যোগঃ তয়া প্রোক্তঃ সাম্যেন মধুসুদন ॥
এতস্য অহম্ ন পশ্যামি চঞ্চলত্বাত্ স্থিতিম্ স্থিরাম্ ॥৩৩॥
অর্থ-অর্জুন বললেন-হে মধুসুদন তুমি যে যোগ উপদেশ করলে, আমার মনের চঞ্চল স্বভাব বসত আমি তা সত্ত্বেও নিশ্চল স্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।

চঞ্চলম হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবত্ দৃঢ়ম্ ॥
তস্য অহম্ নিগ্রহম্ মন্যে বায়ো ইব সুদুস্করম ॥৩৪॥
অর্থ-হে কৃষ্ণ মন অত্যন্ত চঞ্চল প্রবল এবং শরির ও ইন্দ্রিয়াদি বিক্ষেপ উত্পাদক তাকে বিষয় বাসনা থেকে নিবৃত্ত করা অত্যন্ত কঠিন তাই এই মনকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভুত করার থেকেও কঠিন বলে আমি মনে করি

ভগবান উবাচ
অসংশয়ম্ মহাবাহো মনঃ দুর্নিগ্রহম্ চলম্ ॥
অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেন চ গৃহ্যতে ॥৩৫॥
অর্থ-ভগবান বললেন-হে মহাবাহো মন যে দুর্বার ও চঞ্চল ততে কোন সন্দেহ নাই।কিন্তু হে কৌন্তেয় ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভুত করা যায়।

অসংযত আত্মনা যোগঃ দুসপ্রাপ্যঃ ইতি মে মতিঃ ॥
বশ্য আত্মনা তু যততা শক্যঃ অবাপ্তুম্ উপায়ত ॥৩৬॥
অর্থ-অসংযত ব্যাক্তির পক্ষে আত্মোউপলব্ধি দুসপ্রাপ্যঃ কিন্তু যার মন সংযত এবং যিনি যথার্থ উপায় অবলম্বন করে মনকে বশ করতে চেষ্টা করেন তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করে।
অর্জন ঊবাচ
অযতিঃ শ্রদ্ধয়া উপেতঃ যোগাত্ চলিত মনসঃ ॥
অপ্রাপ্য যোগ সংসিদ্ধিম্ কাম্ গতিম্ কৃষ্ণ গচ্ছতি ॥৩৭॥
অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে কৃষ্ণ শ্রদ্ধাবান সম্যক যত্নহীন যোগচ্যুত যোগী যোগে সিদ্ধি লাভ না করলে কোন মার্গে গমন করেন।

কচ্চিত্ ন উভয় বিভ্রষ্টঃ ছিন্ন অভ্রম্ ইব নশ্যতি ॥
অপ্রতিষ্ঠঃ মহাবাহো বিমূঢ় ব্রাহ্মনঃ পথি ॥৩৮॥
অথর্- হে মহাবাহো কৃষ্ণ ব্রহ্ম লাভের পথ থেকে বিমূঢ় হয়ে অপ্রতিষ্ঠ হয়ে পড়ে যে ব্যক্তি, সে কি ছিন্ন মেঘের মত একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

এতত্ মে সংশয়ম্ কৃষ্ণ ছেত্তুম্ অর্হসি অশেষতঃ ॥
ত্বত্ অন্যঃ সংসয়স্য তস্য ছেত্তা ন হি উপপদ্যতে ॥৩৯॥
অর্থ-হে কৃষ্ণ তুমিই কেবল আমার এই সংসয় দুর করতে সমর্থ। কারন তুমি ছারা আর কেউ এই সংসয় দুর করতে পারবে না।
ভগবান উবাচ
পার্থ নৈব ইহ ন অমুত্র বিনাশ তস্য বিদ্যতে ॥
ন হি কল্যান কৃত্ কশ্চিত্ দুর্গতিম্ তাত গচ্ছতি ॥৪০॥
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ শূভানুষ্ঠানকারি পরমার্থবিদের ইহলোক এবং পরলোকে কোন দুর্গতি হয় না,হে বৎস্য তার কারন কল্যান কারির কখনো অধঃগতী হয় না।

প্রাপ্য পুন্যকৃতম্ লোকান উষিত্বা শাশ্বতীঃ সমাঃ ॥
শুচিনাম্ শ্রীমতাম্ গেহে যোগভ্রষ্টঃ অভিজায়তে ॥৪১॥
অর্থ-যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুন্যবানদের প্রাপ্য সর্গাদি লোক সকলে বহুকাল বাস করে সদাচারি গৃহে অথবা ধনীলোকদের গৃহে জন্ম গ্রহন করেন।

অথবা যোগীনাম্ এব কুলে ভবতী ধীমতাম্ ॥
এতত্ হি দুর্লভতরম্ লোকে জন্ম যত্ ঈদৃশম্ ॥৪২॥
অর্থ-অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীগনের বংশে জন্মগ্রহন করেন।এই প্রকার জন্ম এই জগতে অবশ্য অত্যন্তই দুর্লভ।

অত্র তম বুদ্ধি সংযোগম লভতে পৌর্বদেহিকম্ ॥
যততে চ ততঃ ভূয় সংসিদ্ধৌ কুরুনন্দন ॥৪৩॥
অর্থ-হে কুরুনন্দন সেই প্রকার জন্মগ্রহন করার ফলে তিনি পুনরায় তার পুর্বজন্মকৃত পারমার্থিক চেতনায় বুদ্ধি সংযোগ লাভকরে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হন।

পুর্ব অভ্যাসেন তেন এব হ্রিয়তে হি অবশঃ অপি সঃ ॥
জিজ্ঞাসুঃ অপি যোগস্য শব্দব্রহ্ম অতিবর্ততে ॥৪৪॥
অর্থ-তিনি পুর্ব জন্মের অভ্যাস বশে যেন অবশ হয়েও যোগ সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্র জিজ্ঞাসু পুরুষ যোগ অনুশিলন করার সময়ই বেদোক্ত সকাম কর্ম মার্গকে অতিক্রম করেন,অর্থাত্ সকাম কর্ম মার্গে যে ফল নিদৃষ্ট আছে, তার থেকে উত্কৃষ্ট লাভ করেন।

প্রযত্নাত্ যতমানঃ তু যোগী সংশুদ্ধ কিল্বিষঃ ॥
অনেক জন্ম সংসিদ্ধঃ ততঃ যাতি পরাম্ গতিম্ ॥৪৫॥
অর্থ-যোগী ইহ জন্মে পুর্বজন্মকৃত যত্ন অপেক্ষা অধিকতর যত্নকরে পাপ মুক্তহয়, পুর্ব জন্মের সাধন সঞ্চিত সংস্কার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করে পরম গতী লাভ করেন।

তপস্বিভ্যঃ অধিকঃ যোগী জ্ঞানিভ্যঃ অপি মতঃ অধিকঃ ॥
কর্মিভ্যঃ চ অধিকঃ যোগী তস্মাত্ যোগী ভব অর্জুন ॥৪৬॥
অর্থ-যোগী তপস্বীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং সকাম কর্মিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ অতএব হে অর্জুন সর্ব অবস্থাতেই তুমি যোগী হও।

যোগীনাম অপি সর্বেষাম মদ্গতেন অন্তরাত্মনা ॥
শ্রদ্ধাবান ভজতে যঃ মাম সঃ মে যুক্ততমঃ মতঃ ॥৪৭॥
অর্থ-যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন,তিনিই সব চেয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে আমার সঙ্গেযুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের খেকে শ্রেষ্ঠ

Wednesday, 28 September 2016

"নবপত্রিকা" কি?


দুর্গা পূজার সময় যদি আমরা মণ্ডপে গিয়ে শ্রী গণেশ
কে দেখি, ত দেখতে পাই তাঁর পার্শ্বে লাল
পেড়ে শাড়িতে ঘোমটা তে ঢাকা একটি কলা বৃক্ষ দেখি ।
অনেকে এটি কে কলা বৌ ও শ্রী গণেশের
স্ত্রী হিসাবে বলে থাকেন । কিন্তু
আদৌ এটি শ্রী গণেশের বৌ নয় । এটিকে ‘নবপত্রিকা’ বলা হয় ।
এটি মা দুর্গা । অর্থাৎ গণেশের জননী । গণেশের
স্ত্রীর নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি ।
নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ বোঝায় নয়টি পাতা । কিন্তু
এখানে নয়টি উদ্ভিদ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয় । এই
নয়টি উদ্ভিদ মা দুর্গার নয়টি শক্তির প্রতীক । এই নয়টি উদ্ভিদ
হল- কদলী বা রম্ভা ( কলা গাছ ), কচু, হরিদ্রা ( হলুদ ),
জয়ন্তী , বিল্ব ( বেল ), দাড়িম্ব ( দাড়িম ), অশোক, মান ও ধান
। একটি সপত্র কলাগাছের সাথে অপর আট টি সপত্র উদ্ভিদ
একত্র করে দুটি বেলের
সাথে সাদা অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লাল পাড়
সাদা শাড়ি পড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয় । তারপর
তাতে সিঁদুর দিয়ে দুর্গা দেবীর ডান পাশে রাখা হয় ।
এটি গণেশের ডান পাশে দেখা যায় ।
আসুন এবার নয় টি উদ্ভিদের অধিষ্টাত্রী দেবীর
সম্বন্ধে জানি । কলা গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী ,
কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা, হরিদ্রা গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী উমা, জয়ন্তী গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী কার্ত্তিকী, বিল্ব গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা, দাড়িম্ব গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, অশোক গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা, মান গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী চামুন্ডা ও ধান গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী। দুর্গা পূজোর প্রথম দিন
সপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজেই
নবপত্রিকা কে নিয়ে নিকটস্থ কোন নদী বা পুকুরে স্নান
করাতে নিয়ে যান । সাথে মহিলারা উলু ধ্বনি ও শঙ্খ
ধ্বনি করতে করতে যান, ঢাকী রাও ঢাক বাজাতে বাজাতে যান ।
শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন
শাড়ি পরানো হয়। তারপর
পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান
দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়।
পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল
অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর
দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর
বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের
সঙ্গেই পূজিত হতে থাকেন । বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল,
নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার
সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকাস্থ
অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পূজা করা হয় না।
নবপত্রিকা কি ভাবে দুর্গা পূজার সাথে মিশে গেলো –
তা নিয়ে পণ্ডিত গনের নানা মত । মার্কণ্ড
পুরানে নবপত্রিকা পূজার বিধান নেই । দেবী ভাগবতে নব
দুর্গার উল্লেখ থাকলেও নবপত্রিকার উল্লেখ নেই ।
কালিকা পুরানে এই নিয়ম না থাকলে সপ্তমী তে পত্রিকা পূজার
কথা আছে । কৃত্তিবাসী রামায়নে এর উল্লেখ পাওয়া যায় । –
“বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”
সম্ভবত শবর জাতি গণ কোন এক সময় নয়টি গাছ দিয়ে নব
দুর্গার পূজা করতেন। সেই থেকে এই
রীতি হয়তো দুর্গা পূজোতে প্রবেশ করেছে । আবার
শস্য দেবীকে দুর্গা দেবীর সাথে মিশিয়ে দেবার জন্য
এই রীতির আয়োজন । যোগেশচন্দ্র রায়
বিদ্যানিধি লিখেছেন, “আমি নবপত্রিকার উৎপত্তি ও প্রয়োজন
বিন্দুমাত্র বুঝিতে পারি নাই। নবপত্রিকা নবদুর্গা, ইহার দ্বারাও কিছুই
বুঝিলাম না। দেবীপুরাণে নবদুর্গা আছে, কিন্তু
নবপত্রিকা নাই।... নবপত্রিকা দুর্গাপূজার এক আগন্তুক অঙ্গ
হইয়াছে।... বোধ হয় কোনও
প্রদেশে শবরাদি জাতি নয়টি গাছের
পাতা সম্মুখে রাখিয়া নবরাত্রি উৎসব করিত। তাহাদের
নবপত্রী দুর্গা-প্রতিমার পার্শ্বে স্থাপিত হইতেছে।

Thursday, 11 August 2016

বিয়েতে সাত পাক ঘুরানো হয় কেন....???

বিয়ে মানে দুটো মনের মিলন, দুটো পরিবারের মিলন। বিয়েতে অনেক নিয়ম কানুন মানা হয়। এক এক ধর্মের এক এক নিয়ম। হিন্দু মতে বিয়ে মানেই শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সাত পাকে ঘোরা, খই পোড়ানো, সিঁদুর দান। তবে এই সমস্ত রীতি কিন্তু শুধুই ধর্মীয় কারণে নয়। এর পিছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে। হিন্দু মতে বিয়েতে আমরা দেখতে পাই, আগুনের কুণ্ডলীর চারপাশে বর-বউকে ঘুরতে। একে সাত পাকে বাঁধা পড়া বলা হয়। বলা হয়, এর মাধ্যমে অগ্নিদেবতাকে বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। শুধু আগুনের চারপাশে ঘোরাই নয়, এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিতে হয় একে অপরকে। প্রথম প্রতিশ্রুতি : প্রথমে বর তাঁর বউ এবং তাঁর ভাবী সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন নেবেন। দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি : এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে সবরকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি স্বামীর সবরকম যন্ত্রণায় পাশে থাকবেন। তৃতীয় প্রতিশ্রতি : এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন এবং তাঁদের দেখভাল করবেন। একই প্রতিশ্রুতি এবার কনেও করেন। চতুর্থ প্রতিশ্রুতি : স্ত্রীর কাছে তাঁর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন। পঞ্চম প্রতিশ্রুতি : যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন স্ত্রী। ষষ্ঠ প্রতিশ্রুতি : স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। সপ্তম প্রতিশ্রুতি : শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবেও সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন বর। বিনিময়ে স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এই প্রতিশ্রুতিগুলো পরস্পরের প্রতি বহন করতে হয় বলেই হিন্দু বিয়ের শাস্ত্রীয় নাম হলো ‘বিবাহ’, অর্থাৎ ‘বিশেষভাবে বহন করা’। তাই হিন্দু বিয়ে মানেই আজীবনের সুরক্ষা ও অবিচ্ছেদ্য সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুতি।

Thursday, 28 July 2016

পঞ্চম অধ্যায়ঃ- কর্ম সন্নাস যোগ

অর্জুন উবাচ
সন্নাসম্ কর্মনাম্ কৃষ্ণ পুনঃ যোগম্ চ
শংসসি ।
যত্ শ্রেয়ঃ এতয়ো একম্ তত্
মে ব্রুহি সুনিশ্চিতম্ ।।১

অর্থ-অর্জুন বললেন হে কৃষ্ণ প্রথম
তুমি আমাকে কর্ম ত্যাগ
করতে বললে,এবং তারপর কর্তব্য
কর্মের অনুষ্ঠান করতে বললে। এই
দুটির মধ্যে কোনটি অধিকতর
কল্যানকর তা সুনিশ্চিত
ভাবে আমাকে বল।

ভগবান উবাচ
সন্ন্যাসঃকর্মযোগঃ চ
নিঃশ্রেয়সকরৌ উভৌ ।
তয়ো তু কর্মসন্ন্যাসাত্
কর্মযোগঃ বিশিষ্যতে ।।২

অর্থ-ভগবান বললেন-কর্ম ত্যাগ
এবং কর্ম-যোগ উভয়েই
মুক্তি দায়ক। এই দুটির
মধ্যে কর্মযোগ কর্মসন্নাস
থেকে শ্রেয়।

জ্ঞেয় সঃ নিত্য সন্নাসী যঃ ন
দেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি ।
নির্দ্ধন্ধঃ মহাবাহো সুখম্
বন্ধাত্ প্রমুচ্যতে ।।৩

অর্থ- হে মহাবাহো যিনি নির্দ্ধন্ধ
এবং কর্মফলের
প্রতি আকাঙ্খা করে না তিনিই
নিত্য সন্নাসী তিনিই পরম
সুখে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ
করে।

সাংখ্য যোগৌ পৃথক
বালাঃ প্রবদন্তি ন
পন্ডিতাঃ ।
একম্ অপি আস্থিতঃ সম্যক
উভয়োঃ বিন্দতে ফলম ।।৪

অর্থ- মুর্খেরাই কেবল কর্মযোগ
সাংখ্য যোগ পৃথক বলে মনে করে।
পন্ডিতেরা তা বলে না।
সাংখ্যযোগ বা কর্মযোগ
যেটাকেই সুন্দও রুপে আচরন কর
তাতেই উভয়ে উভয়ের ফল লাভ
করতে পারবে।

যত্ সাঃ খ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তত্
যোগৈঃ অপি গম্যতে।
একম্ সাংখ্যম্ চ যোগম্ চ
যঃ পশ্যতি সঃ পশ্যতি ।।৫

অর্থ-যিনি জানেন কর্ম
ত্যাগের মাধ্যমে যে গতী লাভ
হয়,কর্মযোগের দ্বারাও সেই
গতি প্রাপ্ত হওয়া যায়,
এবং তাই যিনি কর্ম
যোগ ও কর্ম ত্যাকে এক
বলে জানেন তিনিই যথার্থ
তত্তদ্রষ্টা।

সন্নাসঃ তু মহাবাহো দুঃখম্
আপ্তুম্ অযোগতঃ ।
যোগযুক্তঃ মুনি ব্রহ্ম ন চিরেন
অধিগচ্ছতি ।।৬

অর্থ-হে মহাবাহো কর্মযোগ
ব্যতীত কেবল কর্ম ত্যাগরুপ সন্নাস
দুঃখ জনক,যোগ যুক্ত মানুষ
অচিরেই পরম গতী লাভ করে।

যোগযুক্তঃ বিশুদ্ধত্মা বিজিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ ।
সর্বভূতাত্মা ভূতাত্মা কুর্বন্নপি ন
লিপ্যতে ।।৭

অর্থ-যোগযুক্ত জ্ঞানি ত্রিবিধ
বিশুদ্ধ বুদ্ধি বিশুদ্ধ চিত্ত
এবং জিতেন্দ্রিয়। তারা সমস্ত
জীবের অনুরাগভাজন হয়ে সমস্ত
কর্ম করেও লিপ্ত হয় না।

ন এব কিঞ্চিত্ করোমি ইতি যুক্ত
মন্যেতে তত্ত্ববিত্ ।
পশ্যন শূন্বন স্পৃশন জিঘ্রন অশ্নন গ্চ্ছন
স্বপন শ্বসন ।।৮

প্রলপন বিসৃজন গৃহ্নন উন্মিষন
নিমিষন অপি ।
ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেষু
বর্তন্তে ইতি ধারয়ন ।।৯

অর্থ-চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত
ব্যক্তি দর্শন শ্রবন স্পর্শ ঘ্রান
ভোজন গমন নিদ্রা ও
নিশ্বাষ,আদিক্রিয়া করেও
সর্বদা জানেন যে প্রকৃত
পক্ষে কিছুই করছেন না। কারন
প্রলাপ, দ্রব্য ত্যাগ, দ্রব্য গ্রহন,
চক্ষুর উন্মেষ এবং নিমেষ করার
সময় তিনি সব সময় জানেন যে,
জড় ইন্দ্রিয়গুলিই কেবল
ইন্দ্রিয়ের বিষয় প্রবৃত্ত হয়েছে,
তিনি নিজে কিছুই করছে না।

ব্রহ্মণি আধায় কর্মাণি সঙ্গম্
ত্যত্ত্বা করোতি যঃ ।
লিপ্যতে ন সঃ পাপেন পদ্মপত্রম্
ইব অম্ভসা ।।১০

অর্থ-যিনি আসক্ত হয়ে কর্ম করেন
এবং কর্মের সমস্থ ফল পরমেশ্বর
ভগবানকে অর্পন করেন, কোন
পাপ তাকে স্পর্শ
করতে পারে না ঠিক যেমন জল
পদ্মপাতাকে স্পর্শ
করতে পারে না।

কায়েন মনসা বুদ্ধা কেবলৈঃ ইন্দ্রিয়ৈ অপি ।
যোগিনঃ কর্ম কুর্বন্তি সঙ্গম্
ত্যক্তা আত্ম শুদ্ধয়ে ।।১১

অর্থ-আত্ম শুদ্ধির জন্য
যোগিরা কর্ম ফলের
আসক্তি ত্যাগকরে। দেহ মন
বুদ্ধি এমনকি ইন্দ্রিয় দ্বারাও
কর্ম করে।

যুক্তঃ কর্মফল ত্যাক্তা শান্তিম্
আপ্নোতি নৈষ্টিকীম্ ।
অযুক্তঃ কাম্ কারেন
ফলে সক্তঃ নিবধ্যতে ।।১২

অর্থ-যোগী কর্মফল ত্যাগ
করে নৈষ্টিক শান্তি লাভ
করেন কিন্তু সকাম
কর্মি কর্মফলের প্রতি আসক্ত
হয়ে কর্ম করার ফলে কর্মের
বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

সর্ব কর্মানি মনসা সংনস্য
আস্তে সুখম্ বশী ।
নবদ্বারে পুরে দেহী ন এব কুর্বন ন
কারয়ন ।।১৩

অর্থ-বাহ্যে সমস্ত কার্য্য করেও
মনের দ্বারা সমস্ত কার্য্য ত্যাগ
করে জীব নবদ্বার বিশিষ্ট
দেহরুপ গৃহে পরম সুখে বাস
করতে থাকেন,তিনি নিজেও
কিছু করেন না এবং কাউকে দিয়েও কিছু
করান না।

ন কর্তৃত্বম ন কর্মানি লোকস্য
সৃজতি প্রভূ ।
ন কর্মফল সংযোগম্ স্বভাবঃ তু
প্রবর্ততে ।।১৪

অর্থ-দেহরুপ নগরীর প্রভূ জীব,
কর্মসৃষ্টি করে না,
সে কাউকে দিয়ে কিছু করান
না বিভূএবং সে কর্মের ফল
সৃষ্টি করে না এই সবই হয়
জড়া প্রকৃতির গুনের প্রভাবে।

ন আদত্তে কস্যচিত্ পাপম্ চ এব
সুকৃতম্ ।
অজ্ঞানেন আবৃতম্ জ্ঞানম্ তেন
মুহ্যতি জন্তবঃ ।।১৫

অর্থ-ভগবান জীবের পাপ
এবং পুন্য কিছুই গ্রহন করেন না।
অজ্ঞানের দ্বারা আবৃত হওয়ার
ফলে জীবসত্তা এই প্রকৃত জ্ঞান
সম্পর্কে মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

জ্ঞনেন তু তত্ অজ্ঞানম্ যেষাম্
নাশিতম্ আত্মনঃ ।
তেষাম্ আদিত্যবত্ জ্ঞানম্
প্রকাশয়তি তত্ পরম্ ।১৬।

অর্থ-জ্ঞানের প্রভাবে যখন
অজ্ঞান বিনষ্ট হয় তখন তার
কাছে সব কিছু যথাযথ
ভাবে প্রকাশিত হয়; ঠিক যেমন
দিন মানে সুর্যের উদয়ে সব কিছু
প্রকাশিত হয়।

তদ্বুদ্ধয়
তদাত্মনঃ তন্নিষ্ঠাঃ তত্পরায়নাঃ ।
গচ্ছন্তি অপুনরা বৃত্তিম জ্ঞান
নির্ধুত কল্মষাঃ ।।১৭

অর্থ-যার বুদ্ধি ভগবানের
প্রতি উন্মুখ হয়েছে মন ভগবানের
চিন্তায় একাগ্র হয়েছে,
নিষ্টা ভগবানে দৃঢ়
হয়েছে,এবং যিনি ভগবানকে তার
একমাত্র আশ্রয় বলে গ্রহন
করেছেন,জ্ঞানের দ্বারা তার
সমস্ত কলুষ সম্পুর্নরুপে বিধৌত
হয়েছে এবং তিনি জন্ম মৃত্যুর
বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছে।

বিদ্যা বিনয়
সম্পন্নে ব্রহ্মনে গবি হস্তিনি ।
শুনি চ এব শ্বপাকে চ
পন্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ।।১৮

অর্থ-যথার্থ জ্ঞানবান পন্ডিত
বিদ্যাবিনয় সম্পন্ন ব্রাহ্মন
গাভী হস্তি,কুকুর ও চন্ডাল
সকলের প্রতি সমদর্শি হয়।

ইহ এব তৈঃ জিতঃ সর্গ যেষাম্
সাম্যে স্থিতম্ মনঃ ।
নির্দোশম হি সমম ব্রহ্ম তস্মাত্
ব্রহ্মনি তে স্থিতাঃ ।।১৯

অর্থ-যাদের মন সাম্যে অবস্থিত
হয়েছে তারা ইহ লোকেই
সংসার জয় করেছেন।
তারা ব্রহ্মের মতো নির্দোশ।
তারা ব্রহ্মতেই অবস্থিত
হয়ে আছে।

প্রহৃষ্যেত্ প্রিয়ম প্রাপ্য ন
উদ্ধিজেত্ প্রাপ্য চ অপ্রিয়ম ।
স্থির বুদ্ধি অসংমুঢ় ব্রহ্মবিদ
ব্রহ্মনি স্থিত ।।২০

অর্থ-যে ব্যক্তি প্রিয় বস্তুর
প্রাপ্তিতে উত্ফুল্য হয়
না এবং অপ্রিয় বস্তুর
প্রাপ্তিতেও বিচলিত হয়
না,যিনি স্থিরবুদ্ধি মোহশুন্য
এবং ভগবত্
তত্ত্ববেত্তা তিনি ব্রহ্মতেই
অবস্থিত রয়েছে।

বাহ্যস্পর্শেষু
অসক্তত্মা বিন্দতি আত্মনি যত্
সুখম্ ।
সঃ ব্রহ্ম যোগযুক্তত্মা সুখম্ অক্ষরম
অশ্নুতে ।২১।

অর্থ-সেই ব্রহ্মবিদ পুরুষ কোন রকম
জড় ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের
প্রতি আকৃষ্ট হন না,
তিনি চিত্জগত্ সুখ লাভ করেন।
ব্রহ্মে যোগযুক্ত
হয়ে তিনি অক্ষয় সুখ ভোগ করেন।

যে হি সংস্পর্শেজাঃ ভোগাঃ দুঃখ
যোনয়ঃ এব তে ।
আদি অন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন
তেষু রমতে বুধঃ ।।২২

অর্থ-বিবেকবান পুরুষ
ইন্দ্রিয়জাত দুঃখজনক বিষয়
ভোগে আসক্ত হন না।
হে কৌন্তেয় এই ধরনের সুখ-ভোগ
উত্পত্তি হয় এবং বিনাশশীল।
তাই বুদ্ধিমান
ব্যক্তিরা তাতে প্রীতি লাভ
করেন না।

শক্নোতি ইহৈব যঃ সোঢুম্ প্রাক
শরির বিমোক্ষণাত্ ।
কাম ক্রোধ উদ্ভবম্ বেগম্
সঃ যুক্তঃ সঃ সুখী নরঃ ।।২৩

অর্থ-এই দেহ ত্যাগ করার
পুর্বে যিনি কাম ক্রোধ
ইত্যাতির বেগ সহ্য করতে সক্ষম
হন, তিনিই যোগী এবং এই
জগতে তিনিই সুখী হন।।

যঃ অন্তঃ-
সুখঃ অন্তরারামঃ তথা অন্তর্জোতিঃ এব
যঃ ।
সঃযোগী ব্রহ্ম নির্বানম্
ব্রহ্মভূতঃ অধিগচ্ছতি ।।২৪

অর্থ-যিনি আত্মাতেই সুখ অনুভব
করেন যিনি আত্মাতেই
ক্রীড়াযুক্ত এবং আত্মজ্ঞানের
আলোকে উদ্ভাসিত তিনিই
যোগী এবং তিনিই ব্রহ্ম
নির্বান লাভ করেন।

লভন্তে ব্রহ্মনির্বানম ঋষয় ক্ষীন
কল্মষাঃ ।
ছিন্ন
দ্বৈধাঃ যতাত্মনঃ সর্বভূত
হিতে রতাঃ ।।২৫

অর্থ-সংযত চিত্তে সমস্ত
জীবের কল্যানেরত এবং সংশয়
রহিত নিস্পাপ ঋষীগন ব্রহ্ম
নির্বান লাভ করে।

কাম ক্রোধ বিমুক্তানাম্
যতীনাম্ যতচেতসাম্ ।
অভিতঃ ব্রহ্ম নির্বানম্
বর্ততে বিদিতাত্মনাম্ ।।২৬

অর্থ-কাম ক্রোধ শুন্য সংযত চিত্ত
আত্মতত্ত্ব সন্নাসিরা অচিরেই
ব্রহ্ম লাভ করেন।

স্পর্শান কৃত্বা বহিঃ বাহ্যান
চক্ষুঃ চ এব অন্তরে ভ্রুবোঃ ।
প্রাণাপাণৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তর
চারিনৌ ।।২৭

যত ইন্দ্রিয় মনঃ বুদ্ধি মুনি মোক্ষ
পরায়ণঃ ।
বিগত ইচ্ছা ভয়
ক্রোধঃ যঃ সদা মুক্তঃ এব
সঃ ।।২৮

অর্থ-মন থেকে বাহ্যজ্ঞান
প্রত্যাহার করে,ভ্রুযুগলের
মধ্যে দৃষ্টি স্থির করে,
নাসিকার মধ্যে বিচরনশীল
প্রান ও অপান বায়ুর উর্দ্ধ ও
অধোগতি রোধ করে, ইন্দ্রিয় মন
ও বুদ্ধি সংযম করে ভয় ও ক্রোধ
শুন্য হয়ে যে মুনি সর্বদা বিরাজ
করেন,তিনিই
নিশ্চিতভাবে জীবন্মুক্ত।।

ভোক্তারম যজ্ঞ তপষাম সর্বলোক
মহেশ্বরম্ ।
সুহৃদম্ সর্বভূতানাম্ জ্ঞাত্বা মাম্
শান্তিম্ ঋচ্ছতি ।।২৯

অর্থ-আমাকে সমস্ত যজ্ঞ
এবং তপস্যার পরম
উদ্দেশ্যরুপে জেনে সর্বলোকের
মহেশ্বর এবং সকলের
উপকারি সুহৃদরুপে আমাকে জেনে যোগীরা জড়জগতের
দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত
হয়ে শান্তি লাভ করে।

চতুর্থ অধ্যায়ঃ- জ্ঞান যোগ

ভগবান উবাচ
ইমম বিবস্বতে যোগম্ প্রোক্তবান
অহম্ অব্যয়ম্ ।
বিবস্বান মনবে প্রাহ
মনুঃ ইক্ষাকবে অব্রবীত্ ।।১

অর্থ-ভগবান বললেন-
অমি পুর্বে সুর্য্যদেব
বিবশ্বানকে এই অব্যয় নিস্কাম
কর্মসাধ্য জ্ঞান যোগ
বলে ছিলাম। সুর্য
তা মানবজাতির জনক
মনুকে বলেন এবং মনু
তা ইক্ষাকুকে বলেছিলেন।

এবম্ পরম্পরা প্রাপ্তম্ ইমম্ রাজর্ষয
বিদুঃ ।
সঃ কালেন ইহ
মহতা যোগঃ নষ্টঃ পরন্তপ ।।২

অর্থ-এই ভাবে পরম্পরের
মাধ্যমে এই পরম বিজ্ঞান
রাজর্ষিরা লাভ করেছিল
কিন্তু কালের
প্রভাবে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিল
এবং সেই যোগ নষ্টপ্রায়
হয়েছে।

সঃ এব অয়ম্ ময়া তে অদ্য
যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতন ।
ভক্তঃ অসি মে সখ্য ইতি রহস্যম্
হি এতত্ উত্তমম্ ।।৩

অর্থ-সেই সনাতন যোগ আজ
তোমাকে বললাম কারন
তুমি আমার ভক্ত ও সখা তাই
তুমি এই বিজ্ঞানের
অতি গুরুরহস্য হৃদয়ঙ্গম
করতে পারবে।

অর্জুন উবাচ
অপরম্ ভবতঃ জন্ম পরম জন্ম
বিবস্বতঃ ।
কথম্ এতত্ বিজানিয়াম্ ত্বম
আদৌ প্রক্তবান ইতি ।।৪

অর্থ-অর্জুন বললেন সুর্যদেব
বিবশ্বানের জন্ম হয়েছিল
আপনার জন্মের অনেক পুর্বে।
আপনি সৃষ্টির প্ররম্ভে তাকে এই
জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন
তা আমি কিকরে জানব।

ভগবান উবাচ
বহুনী মে ব্যতীতানি জন্মানি তব
অর্জুন ।
তানি অহম্ বেদ সর্বানি ন ত্বম্
বেত্থ পরন্তপ ।।৫

অর্থ-ভগবান বললেন-হে পরন্তপ
অর্জুন আমার এবং তোমার বহুজনম
অতিত হয়েছে, আমি সে সমস্ত
জন্মের
কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার
না।

অজ অপি সন অব্যয়
আত্মা ভূতানাম্ ঈশ্বর অপি সন ।
প্রকৃতিম্ স্বাম অধিষ্ঠায়
সম্ভবামি আত্মমায়য়া ।।৬

অর্থ-যদিও আমি জন্ম রহিত
এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয়
এবং যদিও আমি সর্ব ভূতের ঈশ্বর
তবুও আমার
অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয়
করে আমি স্বীয় মায়ার
দ্বারা আমার আদি চিন্ময়
রুপে যুগে যুগে অবতির্ন হই।

যদা যদা হি ধর্মস্য
গ্লানিঃ ভবতি ভারত ।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদা আত্মনম্
সৃজামি অহম্ ।।৭

অর্থ-হে ভরত যখনই ধর্মের
অধঃপতন হয়এবং অধর্মের
অভূত্থান হয় তখনই
আমি নিজেকে প্রকাশ
করে অবতির্ন হই।

পরিত্রানায় সাধুনাম
বিনাশায়ঃ চ দুস্কৃতম্ ।
ধর্ম সংস্থাপনার্থায়
সম্ভাবামি যুগে যুগে ।।৮

অর্থ-সাধুদের পরিত্রান করার জন্য
এবং দুস্কৃত কারিদের বিনাশ
করার জন্যএবং ধর্ম সংস্থাপনের
জন্য আমি যুগে যুগে অবতির্ন হই।

জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্ এবম্
যঃ বেত্তি তত্ত্বতঃ ।
ত্যাক্তা দেহম্ পুনঃ জন্ম ন
এতি মাম এতি সঃ অজৃুন ।।৯

অর্থ-হে অর্জুন যিনি আমার এই
প্রকার দিব্য জন্ম এবং কর্ম যথাযথ
ভাবে জানেন তাকে আর দেহ
ত্যাগ করার পর পুনরায় জন্ম গ্রহন
করতে হয় না তিনি আমার নিত্য
ধাম লাভ করে।

বীত রাগ ভয়
ক্রোধাঃ মন্ময়া মাম্
উপাশ্রিতাঃ ।
বহবঃ জ্ঞান
তপসা পুতাঃ মদ্ভাবম
আগতাঃ ।।১০

অর্থ-আসক্তি ভয় ক্রোধ
থেকে মুক্ত
হয়ে সম্পুর্নরুপে আমাতে মগ্ন
হয়ে, একান্ত ভাবে আমার
আশ্রিত হয়ে, পুর্বে বহু বহু
ব্যক্তি আমার জ্ঞান লাভ
করে পবিত্র হয়েছে এবং সেই
ভাবে সকলেই আমার
প্রীতি লাভ করিয়াছে।

যে যথা মাম প্রপদ্যন্তে তান তথঅ
এব ভজামি অহম্ ।
মম বর্ত অনুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ
সর্বশঃ ।।১১

অর্থ-যে যেভাবে আমার
প্রতি আত্ম সমর্পন
করে,প্রপত্তি স্বীকার
করে,আমি তাকে সেইভাবেই
পুরুষকৃত করি। হেপার্থ সকলেই
সর্বতেভাবে আমার অনুসরন করে।

কাঙ্ক্ষন্ত কর্মনাম সিদ্ধিম্
যজন্তে ইহ দেবতাঃ ।
ক্ষিপ্রম্
হি মানুষে লোকে সিদ্ধির্ভবতি কর্মজা ।।
১২

অর্থ-এই জগতে মনিুষ সকাম
কর্মের
সিদ্ধি কামনা করে এবং তাই
তারা বিভিন্ন দেব দেবীর
উপসনা করে। সকাম কর্মের ফল
অতি শীগ্রই লাভ কহয়।

চাতুর্বর্ন্ ময়া সৃষ্টম্ গুনকর্ম
বিভাগশঃ ।
তস্য কর্তরম্ অপি মাম্
বিদ্ধি অকর্তারম্ অব্যয়ম্ ।।১৩

অর্থ-প্রকির্তির তিনটি গুন
এবং কর্ম অনুসারে আমি মানুষ
সমাজে চারিটি বর্নবিভাগ
সৃষ্টি করিয়ছি । আমিই এই প্রথার
স্রষ্টা হলেও
আমাকে অকর্তা এবং অব্যয়
বলে জানবে।

ন মাম্ কর্মানি লিম্পন্তি ন
মে কর্মফলে স্পৃহা ।
ইতি মাম্
যঃ অভিজানাতি কর্মভিঃ ন
সঃ বধ্যতে ।।১৪

অর্থ-কোন কর্ম
আমাকে প্রভাবিত
করতে পারে না এবং আমিও
কোন কর্মফলের
আকাঙ্খা করি না। আমার এই
তত্ত যে জানেন
তিনি কখনো সকাম কর্মের
বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।

এবম্ জ্ঞাত্বা কৃতম্ কর্ম
পুবৈঃ অপি মুমুক্ষুভি ।
কুরু কর্ম এব তস্মাত্ ত্বম
পুবৈঃ পুর্বতরম্ কৃতম্ ।।১৫

অর্থ-প্রাচিনকালে সমস্ত
পুরুষেরা এই তত্ত অবগত হয়ে সকাম
কর্ম পরিত্যাগ করে মুক্তি লাভ
করেছেন। অতএব তুমিও সেই
প্রাচিন মহাজনের মত চিন্ময়
চেতনায় তোমার কর্তব্য সম্পাদন
কর।

কিম কর্ম কিম অকর্ম
ইতি কবয়ঃ অপি অত্র মহিতাঃ ।
তত্ তে কর্ম প্রবক্ষামি যত্
জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসে অশুভাত্ ।।
১৬

অর্থ-কাকে কর্ম কাকে অকর্ম
বলে তা স্থির
করতে বিবেকী ব্যক্তিরাও
মোহিত হন। আমি সেই বিষয়
তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি।
তুমি তা অবগত হয়ে সমস্ত অশুভ
অবস্থা থেকে মুক্ত হও।

কর্মনঃ হি অপি বোদ্ধব্যম্
বোদ্ধব্যম্ চ বিকর্মনঃ ।
অকর্মন চ বোদ্ধব্যম্
গহনা কর্মনঃ গতিঃ ।।১৭

অর্থ-কর্মের নিগুর তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম
করা অত্যন্ত কঠিন। তাই কর্ম
বিকর্ম এবং অকর্ম সম্বন্ধে যথাযথ
ভাবে জানা কর্তব্য।

কর্মনি অকর্ম যঃ পশ্যেত্
অকর্মনি চ কর্ম যঃ ।
সঃ বুদ্ধিমান মনুষ্যেসু
সঃ যুক্তঃ কৃত্স্ন কর্মকৃত্ ।।১৮

অর্থ-যিনি কর্মে অকর্ম দর্শন
করেন এবং অকর্মে কর্ম দর্শন
করেন,তিনিই মানুষের
মধ্যে বুদ্ধিমান। সবরকম
কর্মে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও
তিনি চিনন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত।

যস্য সর্বে সমারম্ভাঃ কাম
সংকল্প বর্জিতাঃ ।
জ্ঞান অগ্নি দগ্ধ কর্মানাম তম্
আহুঃ পন্ডিতম্ বুধাঃ ।।১৯

অর্থ-যার সমস্ত প্রচেষ্টা কাম
এবং সংকল্প রহিত
তিনি পুর্নজ্ঞানে অধিষ্ঠিত।
জ্ঞানিগন বলেন যে তার সমস্ত
কর্মের প্রতিক্রিয়া পরিশুদ্ধ
জ্ঞানাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হইয়াছে।

ত্যাক্তা কর্মফলাসঙ্গম্ নিত্য
তৃপ্ত নিরাশ্রয়ঃ ।
কর্মনি অভিপ্রবৃত্তঃ অপি ন এব
কিঞ্চিত্ করতি সঃ ।।২০

অর্থ-কর্মফলের আসক্তি সম্পুর্নরুপে ত্যাগ
করে সর্বদা তৃপ্ত এবং কোন রকম
আশ্রয়ের অপেক্ষা যিনি করেন
না, সব রকম কর্মে যুক্ত
থাকা সত্ত্বেও তিনি কর্ম
ফলের আশায় কোনও কিছুই করেন
না।

নিরাশীঃ যত
চিত্তাত্মা ত্যক্ত সর্ব পরিগ্রহ ।
শরিরম্ কেবলম্ কর্ম কুর্বন ন
আপ্নোতি কিল্লিষম্ ।।২১

অর্থ-এই প্রকার
জ্ঞানিব্যক্তি তার মন
এবং বুদ্ধিকে সর্বোতভাবে সংযত
করে কার্য করেন।
তিনি ফলেরআশা পরিত্যাগ
করে এবং প্রভূত্ত করার
প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবল
জীবন ধারনের জন্য কর্ম করেন। এই
ভাবে কর্ম করার ফলে কোন রকম
পাপ তাকে স্পর্শ
করতে পারে না।

যদৃচ্ছা লাভ সন্তুষ্টঃ দ্বন্ধ
অতিতঃ বিমত্সরঃ ।
সম সিদ্ধৌ অসিদ্ধৌ চ
কৃত্বা অপি ন নিবধ্যতে ।।২২

অর্থ-যিনি অনায়সে যা লাভ
করেন তাতেই সন্তুষ্ট
থাকেন,যিনি সুখ-দুঃখ রাগ
দ্বেষ ইত্যাদি দ্বন্ধের বশীভূত হন
না এবং মাত্সর্যশুন্য, যিনি কার্যের সাফল্য
এবং অসাফল্যে অবিচালিত
থাকেন তিনি কর্ম সম্পাদন
করলেও কর্মফলের
দ্বারা কখনো আবদ্ধ হয় না।

গতসঙ্গস্য মুক্তস্য জ্ঞানাবস্থিত
চেতসাঃ ।
যজ্ঞায় আচরতঃ কর্ম সমগ্রম্
প্রবলিয়তে ।।২৩

অর্থ-জড়া প্রকৃতির গুনের প্রভাব
থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময়
জ্ঞাননিষ্ট ব্যক্তি ভগবানের
উদ্দেশ্যে সমর্পিত যজ্ঞের
উদ্দেশ্যে যে কর্ম সম্পাদন করেন
সে সকল কর্ম সম্পুর্নরুপে লয় প্রাপ্ত
হয়।

ব্রহ্ম অর্পনম্ ব্রহ্ম হবিঃ ব্রহ্ম
অগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্ ।
ব্রহ্ম এব তেন গন্তব্যম্ ব্রহ্ম কর্ম
সমাধিনা ।।২৪

অর্থ-যিনি কৃষ্ণ ভাবনায় সম্পুর্ন
মগ্ন তিনি অবশ্যই
চিত্জগতে উন্নিত হবেন,কারন
তার সমস্ত কার্য কলাপ চিন্ময়।
তার কর্মের উদ্দেশ্য চিন্ময়
এবং সেই
উদ্দেশ্যে তিনি যা নিবেদন
করেন তাও চিন্ময়।

দৈবম্ এব অপরে যজ্ঞম্
যোগিনঃ পর্যুপাসতে ।
ব্রহ্ম অগ্নৌ অপরে যজ্ঞম্ যজ্ঞেন
এব উপযুহ্বতী ।।২৫

অর্থ-কোন যোগী অধীদেবতাদের
উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করার
মাধ্যমে তাদের উপসনা করেন।
আবার ,অন্য অনেক পরম ব্রহ্মরুপ
অগ্নিতে সব কিছু নিবেদন করার
মাধ্যমে যজ্ঞ করেন।

শ্রোত্রাদীনি ইন্দ্রিয়ানি অন্যে সংযম্
অগ্নিষু জুহ্বতী ।
শব্দদীন্ বিষয়ান অন্যে ইন্দ্রিয়
অগ্নিষু জুহ্বতী ।।২৬

অর্থ-কেউ কেউ মন সংযম রুপ
অগ্নিতে শ্রবন
আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি দেন
আবার অন্য অনেকে ( নিয়মনিষ্ঠ
গৃহস্তেরা) শব্দাদি ইন্দ্রিয়ের
বিষয়কে ইন্দ্রিয়রুপ
অগ্নিতে আহুতি দেন।

সর্বানি ইন্দ্রিয় কর্মানি প্রান
কর্মানি চ অপরে ।
আত্ম সংযম্ যোগ
অগ্নৌ জুহ্বতী জ্ঞান
দীপিতে ।।২৭

অর্থ-মন এবংইন্দ্রিয় সংযমের
মাধ্যমে যারা আত্মজ্ঞান
লাভের
প্রয়াসী তারা তাদের ইন্দ্রিয়
সমস্ত কার্য কলাপ এবং প্রান
বায়ুর দ্বারা প্রদীপ্ত
আত্মা সংযমরুপ
অগ্নিতে আহুতী দেন।

দ্রব্যযজ্ঞঃ তপোযজ্ঞঃ যোগযজ্ঞঃ তথা অপরে ।
সাধ্যায় জ্ঞানযজ্ঞাঃ চ
যতঃ সংশিত ব্রতাঃ ।।২৮

অর্থ-কেউ কেউ দ্রব্য দানরুপ যজ্ঞ
করেন। কেউ কেউ তপস্যারুপ যজ্ঞ
করেন কেউ কেউ অষ্টাঙ্গ
যোগরুপ যজ্ঞ করেন এবং অন্য
অনেকে পারমার্থিক জ্ঞান
লাভের জন্য বেদ অধ্যায়নরুপ
যজ্ঞ করেন।

অপানে জুহ্বতীপ্রাণম্
প্রাণে অপানম তথা অপরে ।
প্রাণ অপান
গতী রুদ্ধা প্রাণায়াম্
পরায়ণাঃ ।
অপরে নিয়ত
আহারাঃ প্রাণান প্রানেষু
জুহ্বতী ।।২৯

অর্থ-আর যারা প্রাণায়াম
চচ্চায় আগ্রহী তারা অপান
বায়ুকে প্রাণবায়ুতে এবং প্রান
বায়কে অপান
বায়ুতে আহূতী দিয়ে অবশেষে প্রাাণ
এবং অপান বয়ুর গতী রোধ
করে সমাধিস্থ হন। কেউ আবার
আহার সংযম করে প্রাণ
বায়ুকে প্রাণবয়ুতেই
আহুতী দেন।

সর্বে অপি এতে যজ্ঞবিদঃ যজ্ঞ
ক্ষপিত কল্মষাঃ ।
যজ্ঞশিষ্ট অমৃতভূজঃ যান্তি ব্রহ্ম
সনাতনম্ ।।৩০

অর্থ-তারা সকলে যজ্ঞ তত্তবিত্
এবং যজ্ঞের প্রভাবে পাপমুক্ত
হয়ে তারা যজ্ঞশিষ্ট অমৃত
আস্ব্বাদন করেন। তারপর সনাতন
প্রকৃতিতে ফিরে যান।

ন অয়ম্ লোকাঃ অস্তি অযজ্ঞস্য
কুতঃ অন্যঃ কুরুসত্তম্ ।।৩১

অর্থ-যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে কেউ
এই
জগতে সুখে থাকতে পারে না,
সুতরাং পরলোক প্রাপ্তির
পরে তাদের কি হবে?

এবম্
বহুবিধাঃ যজ্ঞাঃ বিততাঃ ব্রাহ্মন
মুখে ।
কর্মজান বিদ্ধি তান সর্বান এবম্
জ্ঞাত্বা বিমক্ষ্যসে ।।৩২

অর্থ-এই সমস্ত যজ্ঞই বৈদিগ
শাস্ত্রে অনুমোদিত
হয়েছে এবংএই সমস্ত যজ্ঞ
বিভিন্ন প্রকার কর্মজাত।
তা যথাযথভাবে জানার
মাধ্যমে তুমি মুক্তি লাভ
করতে পারবে।

শ্রেয়ান দ্রব্যময়াত্ যজ্ঞাত্
জ্ঞানযজ্ঞঃ পরন্তপ ।
সর্বম্ কর্ম অখিলম্ পার্থ
জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে ।।৩৩

অর্থ-হে পান্ডব দ্রব্যময় যজ্ঞ
থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়-
হে পার্থ সমস্ত কর্মই চিন্ময়
জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ
করে।

তত্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন
পরিপ্রশ্নেন সেবয়া ।
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানম্
জ্ঞানিনঃ তত্ত্বঃ দর্শিনঃ ।।৩৪

অর্থ-সদগুরু শরনাগত
হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার
চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন
জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃতিম
সেবার দ্বারা তাকে সন্তুষ্ট কর
তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষ
তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান
করবে।

যত্ জ্ঞাত্বা ন পুন মোহম এবম্
যাস্যসি পান্ডবা ।
যেন ভূতানি অশেষানি দ্রক্ষ্যসি
আত্মনি অথো ময়ি ।। ৩৫

অর্থ-হে পান্ডব
এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ
করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না।
যখন জানবে সমস্থ জীবই আমার
বিভিন্ন অংশ
এবং তারা সকলেই
আমাতে অবস্থিত
এবং তারা সকলেই আমার।

অপি চেত্
অসি পাপেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পাপ
কৃত্তমঃ ।
সর্বম জ্ঞানপ্ল্লাবেন এব বৃজিনম্
সন্তরিষ্যসি ।।৩৬

অর্থ-তুমি যদি পাপিদের
চেয়েও পাপিষ্ট হয়ে বলে গন্য
হয়ে থাক,তা হলে এই জ্ঞানরুপ
তরনীতে আরেহন করে তুমি দুঃখ
সমুদ্র পার হতে পারবে।

যথা এধাংসী সমিদ্ধঃ অগ্নিঃ ভস্মস্যাঃ কুরুতে অর্জুন ।
জ্ঞানাগ্নি সর্ব কর্মানি ভস্মস্যাত্ কুরুতে তথা ।। ৩৭

অর্থ-প্রবল রুপে প্রজ্জলিত
অগ্নি যেমন কাষ্টকে ভস্মস্যাত্
করে ,হে অর্জুন
তেমনী জ্ঞানাগ্নি সমস্ত
কর্মকে দগ্ধ করে ফেলে।

ন হি জ্ঞানেন সদৃশম্ পবিত্রম্ ইহ
বিদ্যতে ।
তত্ সময় যোগ সংসিদ্ধঃ কালেন
আত্মনি বিন্দতি ।।৩৮

অর্থ-চিন্ময় তত্ত্ব জ্ঞানের মত
পবিত্র পদার্থ এই জগতে আর নাই।
এই জ্ঞান সমস্ত যোগের
ফলশ্রুতি এবং ভক্তি চর্চ্চার
মাধ্যমে যিনি সেই জ্ঞান
আয়ত্ত
করেন,তিনি কালক্রমে আত্মার
পরাশক্তি লাভ করে।

শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্
তত্পরঃ সংযত ইন্দ্রিয়ঃ।
জ্ঞানম্ লব্ধা পরাম্ শান্তিম্
অচিরেন অধিগচ্ছতি ।।৩৯

অর্থ-সংযতেন্দ্রিয় ও তত্পর
হয়ে চিন্ময়
তত্ত্বজ্ঞানে শ্রদ্ধাবান
ব্যক্তি এইজ্ঞান লাভ
করেন,সেই দিব্যজ্ঞান লাভ
করে তিনি অচিরেই
পরাশান্তি লাভ হন।

অজ্ঞঃ চ অশ্রদ্দধ্যানঃ চ সংশয়
আত্মা বিনশ্যতি ।
ন অয়ম লোক অস্তি ন পরাঃ ন সুখম্
সংশয় আত্মম ।।৪০

অর্থ-মুর্খ এবং শাস্ত্রের
প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখন
ভগবদ্ভক্তি লাভ
করতে পারে না। সন্দিগ্ধ চিত্ত
ব্যক্তি ইহ লোকে সুখভোগ
করতে পারে না এবং পরলোকেও
সুখভোগ করতে পারে না।

যোগ সংন্যাস্ত কর্মনাম জ্ঞান
সংছিন্ন সংশয়ম ।
আত্মবন্তম ন
কর্মনি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।।৪১

অর্থ-অতএব হে ধনঞ্জয়
যিনি নিস্কাম কর্ম যোগের
দ্বারা কর্মত্যাগ করেন,জ্ঞানের
দ্বারা সংশয় নাশ করেন
এবং আত্মার চিন্ময় সরুপ অবগত হন
তাকে কোন কর্মে আবদ্ধ
করতে পারে না।

তস্মাত্ অজ্ঞান সম্ভূতম্ হৃত্স্তম
জ্ঞান অসিনা আত্মনঃ ।
ছিত্ত্বা এনম্ সংশয়ম যোগম্
অতিষ্ঠ উতিষ্ঠ ভারত ।।৪২

অর্থ-হে ভারত তোমার হৃদয়
যে অজ্ঞান প্রসুত সংশয়ের উদয়
হয়েছে তা জ্ঞানরুপ
খড়গের দ্বারা ছিন্ন কর।
যোগাশ্রয় করে যুদ্ধ করার জন্য
উঠে দাড়াও।