Monday, 30 November 2015

প্রথম অধ্যায়ঃ- অর্জুনবিষাদ যোগ (বাংলা অনুবাদ)



০১.অর্জুন বিষাদযোগ [ বাংলা অনুবাদ ]

ধৃতরাষ্ট উবাচ
১অর্থ-ধৃতরাষ্ট জিজ্ঞাসা করলেন হে সঞ্জয় ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্ররা তারপর কি করলেন।
সঞ্জয় উবাচ
২অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে রাজন পান্ডবদের সৈন্য সজ্জা দর্শন করে রাজা দুর্য্যধন দ্রোনাচার্য্যেরকাছে বললেন।
৩অর্থ-হে আচার্য্য পান্ডবদের মহান সৈন্য দল দর্শন করুন যা আপনার অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিষ্য দ্রুপদের পুত্র অত্যনত দক্ষতার সংঙ্গে ব্যুহের আকার রচনা করেন।
৪অর্থ-সে সমস্থ সেনাদের মধ্যে অনেকে ভীম এবং অর্জুনের মত বীর ধনুর্ধারী রয়েছেন এবং যুযুধান বিরাট ও দ্রুপদের মত মহাযোদ্ধা রয়েছেন।

৫অর্থ-সেখানে ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশিরাজ পুরুজিত্ কুন্তিভোজ এবং শৈব্যের মত অত্যন্ত বলবান যোদ্ধারাও রয়েছেন।
৬অর্থ-সেখানে রয়েছেন অত্যন্ত বলবান যুধামন্যু প্রবল পরাক্রামশালী উত্তমৌজ,শুভদ্রার পুত্র এবং দ্রৌপদীর পুত্রগন এই সব যোদ্ধারা সকলেই এক একজন মহারথী।
৭অর্থ-হে দ্বিজত্তম আমাদের পক্ষে যে সমস্ত বিশিষ্ট সেনাপতি সামরিক শক্তি পরি চালনার জন্য রয়েছেন আপনার অবগতীর জন্য আমি তাদের সম্বন্ধে বলছি।
৮অর্থ-সেখানে রয়েছেন আপনার মতোই ব্যক্তিসম্পন্ন-ভীষ্ম কর্ন কৃপ অশ্বত্থমা বিকর্ন এবং সোমদত্তের পুত্র ভূরিশ্রবা যারা সর্বক্ষেত্রে সর্বদা সংগ্রামে বিজয়ী থাকেন।
৯অর্থ-এছারা আর বহু নায়ক রয়েছেন আমাদের জন্য তাদের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত । তারা সকলেই নানা প্রকার অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত এবং তারা সামরিক বিজ্ঞান বিশারদ।
১০অর্থ-আমাদের সৈন্যদল অপরিমিত এবং আমরা পিতামহ ভীষ্মের দ্বারা পুর্নরুপে সুরক্ষিত কিন্তু ভীমের দ্বারা সতর্ক ভাবে সুরক্ষিত পান্ডবের শক্তি সিমিত।
১১অর্থ-এখন আপনারা সকলে নিজ নিজ গুরুত্তপুর্ন স্থানে সমর সেনাসজ্জায় স্থিত হয়ে পিতামহ ভীষ্মকে পুর্ন সাহয্য করুন।
১২অর্থ-তখন কুরু বংশের বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্য্যধনের হর্ষ উত্পাদনের জন্য সিংহের গর্জ্জনের মত অতি উচ্চনাদে তার শঙ্খ বাজালেন।
১৩অর্থ-তারপর শঙ্খ ভেরী পনক আনক ঢাক এবং গোমুখ সিংঙ্গা সমুহ হঠাত্ একত্রে ধনিত হয়ে এক তুমুল শব্দের সৃষ্টি হল।
১৪অর্থ-অন্যদিকে শ্বেত অশ্বসমুহ যুক্ত একদিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন উভয়ে তাদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন।
১৫অর্থ-তখন শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য নামক তার শঙ্খ বাজালেন।এবং অর্জুন বাজালেন তার দেবদত্তক নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজন পৃয় ভীমকর্মা সেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তার ভয়ঙ্কর শঙ্খ।

১৬,১৭,১৮অর্থ-কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্ত বিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন, এবং নকুল এবং সহদেব বাজালেন সুঘোষ এবং মনিপুস্পক নামকশঙ্খ। হে মহারাজ তখন মহান ধনুর্ধর কাশিরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডি,ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট এবং অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ দ্রৌপদীর পুত্রগন, সুভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন।
১৯অর্থ-শঙ্খ নিনাদের সেই শব্দে আকাশ বিদীর্ন হল। পৃথিবী কম্পিত হল এবং তার ফলে ধৃতরাষ্টের হৃদয় প্রবল ভয়ে বিধ্বস্ত হল।
২০অর্থ-সেই সময় পান্ডু পুত্র অরজুন হনুমান চিহ্নিত পতকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে তার ধনুক তুলেনিয়ে শ্বরনিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সমর সজ্জায় বিন্স্ত দেখে হৃষীকেশকে অর্জুন তখন এই কথাগুলি বললেন অর্জুন উবাচ
২১,২২অর্থ-অর্জুন বললেন হে অচ্যুত্ অভ্রান্ত বন্ধু, তুমি উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে আমার রথ স্থাপন কর, যাতে আমি দেখতে পারি যুদ্ধ করার অভিলাষি হয়ে কারা এখানে এসেছে এবং আমাকে অস্ত্রধারন করে কাদের সঙ্গে এই মহা সংগ্রাম করতে হবে।
২৩অর্থ-অমি দেখতে চাই ধৃতরাষ্টের দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন পুত্রদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কারা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে।সঞ্জয় উবাচ
২৪অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে ভারত বংশধর অর্জুন কতৃক এইভাবে আদিষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণ সেই উত্তম রথটি চালিয়ে নিয়ে উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাখলেন।
২৫অর্থ-ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখ পৃথিবীর অন্য সমস্থ নেতাদের সামনে ভগবান হৃষীকেশ বললেন হে পর্থ এখন সমস্ত কৌরবদের দেখ।
২৬অর্থ-তখন অর্জুন উভয়ে দলের মধ্যে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য মাতুল ভ্রাতা শ্বশুর মিত্র শুভকাঙ্খিদের উপস্থিত দেখতে পেলেন।
২৭অর্থ-যখন অর্জুন সকল রকমের বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত দেখলেন তখন তিনি অত্যন্ত কৃপায়াবিষ্ট ও বিষন্ন হয়ে বললেন।
অর্জুন উবাচ
২৮অর্থ-অর্জুন বলিলেন হে প্রিয়বর কৃষ্ণ আমার সমস্ত বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের এমন ভাবে যুদ্ধাভিলাষি হয়ে আমার সামনে অবস্থান করতে দেখে আমার অঙ্গ প্রতঙ্গ অবশ হয়ে আসছে এবং মুখ শুস্কহয়ে উঠছে।
২৯অর্থ-আমার সর্ব শরির কম্পিত ও কেশাগ্র রোমাচিত হচ্ছে। হাত থেকে গান্ডিব খসে পরছে এবং ত্বক যেন জ্বলে যচ্ছে।
৩০অর্থ-হে কেশব আমি এখন স্থির থাকতে পারছি না। আমি বিভ্রান্তী বোধ করছি,আমার চিত্ত উত্ভ্রান্ত হচ্ছে। হে কেশীদৈত্যহন্তা শ্রীকৃষ্ণ আমি কেবলই অমঙ্গ সুচক লক্ষন দর্শন করছি।
৩১অর্থ-হে কৃষ্ণ আত্মীয় স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাইনা রাজ্যসুখ ভোগের কামনা করিনা।

৩২,৩৩,৩৪অর্থ-হে গবিন্দ আমাদের রাজ্যে কি প্রায়োজন, আর সুখভোগ বা জীবন ধারনেই বা কী প্রোয়োজন, যখন দেখছি যাদের জন্য রাজ্য ও ভোগসুখের কামনা, তারা সকলেই এই রণক্ষেত্রে উপস্থিত? হেমধুসুদন যখন আচার্য্য পিত্রিব্য পুত্র, মাতুল শ্বশুর পৌত্র শ্যালক আত্মীয়স্বজন ,প্রান ও ধনাদির আশা পরিত্যাগ করে আমার সামনে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছে, তখন তারা আমাকে বধ করলেও আমি তাদের হত্যা করতে চাইব কেন? হে সর্বজীবসত্তার প্রতিপলক জনার্দন, পৃথিবীর তো কথাই নাই এমন কি ত্রিভুবনের বিনিময়েও আমি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই। ধৃতরাষ্টের পুত্রদের নিধন করে কি সন্তোষ আমরা লাভ করতে পারব?

৩৬অর্থ-এই ধরনের আততায়িদের বধ করলে মহাপাপ আমাদের আচ্ছন্ন করবে। সুতরাং ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সংহার করা আমাদের উচিত্ হবে না। হে শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্মীপতি মাধব আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে কিলাভ হবে।এবং তা থেকে কেমন করে আমরা সুখী হব।
৩৭,৩৮অর্থ-হে জনার্দন যদিও এরা রাজ্যলোভে অভিভুত হয়ে কুলক্ষয় জনিত দোষ ও মিত্রদোহ নিমিত্ত পাপ লক্ষ করছে না, কিন্তু আমরা কুলক্ষয় জনিত দোষ লক্ষ্য করেও এই পাপ কাজে কেন প্রবৃত্ত হব।
৩৯অর্থ-কুলক্ষয় হলে সনাতন কুলধর্ম বিনষ্ট হবে এবং তা হলে সমগ্র বংশ অধর্মে অভিভুত হবে।
৪০অর্থ-হে কৃষ্ণ অধর্মের দ্বারা অভিভুত হলে কুলবধুগন ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং হে বাষ্ণেয় কুলস্ত্রীগন অসত্ চরিত্রা হলে অবাঞ্চিত প্রজাতি উত্পন্ন হয়।
৪১অর্থ-অবাষ্ণিত বর্ন সঙ্কর সন্তান উত্পাদন বৃদ্ধি হলে কুল ও কুলঘাতকেরা নরকগামী হয়। সেই কুলে পিন্ডদান ও তর্পনক্রিয়া লোপপওয়ার ফলে তাদের পিতৃ পুরুষরাও নরকে অধঃপাতিত হয়।
৪২অর্থ-যারা বংশের ঐতিয্য নষ্ট করে এবং তার ফলে অবাষ্ণিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে,তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং বংশের কল্যানধর্ম উত্সন্নে যায়। ফলে সনাতন জাতিধর্ম ও কুলধর্মও বিনষ্ট হয়।
৪৩অর্থ-হে জনার্দন যাদের কুলধর্ম নষ্ট হয়েছে তাদের নিয়ত নরকে বাস করতে হয়, আমি পরস্পরাক্রমে শুনেছি।
৪৪অর্থ-হায়! কী দঃখের বিষয় যে রাজ্য সুখের লাভের আশায় স্বজনদের হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মহাপাপে প্রবৃত্ত হইতেছি।
৪৫অর্থ-প্রতিরোধ রহিত ও নিরস্ত্র অবস্থায় আমাকে যদি শস্ত্রধারী ধৃতরাষ্টের পুত্রেরা যুদ্ধে বধ করে তাহা হলে আমার অধিকতর মঙ্গল হবে।
সঞ্জয় উবাচ
৪৬অর্থ-সঞ্জয় বললেন রনক্ষেত্রে এই কথা বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন। বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন।

ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাংযোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদেঅর্জুনবিষাদযোগোনাম প্রথমোঽধ্যাযঃ ॥১॥

1 comment:

  1. Hi. Thanks for the work. Please continue to the end.

    ReplyDelete