Monday, 30 November 2015

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ- সাংখ্যযোগ



দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সাংখ্যযোগ

সঞ্জয় ঊবাচ
১অর্থ-সঞ্জয় বললেন অর্জুনকে এইভাবে অনুতপ্ত ব্যাকুল এবং অশ্রুশিক্ত দেখে কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসুদন শ্রীকৃষ্ণ বন্ধুভাবে অতি মিষ্টি স্বরে এই কথাগুলি বললেন।
ভগবান উবাচ
২অর্থ-ভগবান বললেন প্রিয় অর্জুন এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধেস্থলে যারা প্রকৃত জীবনের মুল্য বোঝেনা সে সব অনার্যের মত শোকানল তোমার হৃদয় কিভাবে প্রজ্জলিত হল। এই রকমের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নিত করবে না। পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট হবে।

৩অর্থ-হে পার্থ এই অসন্মান জনক ক্লীবত্তের বশোবর্তি হয়োনা এই ধরনের আচরন তোমার পক্ষে অনুচিত্। হেপরন্তপ হৃদয়ের দুর্বলতা পরিত্যাগ করে উঠে দাড়াও।
অর্জুন উবাচ
৪অর্থ-অর্জুন বললেন হে মধুসুদন এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্ম এবং দ্রোনের মত পরম পূজনীয় ব্যাক্তিদের কেমন করে আমি বানের দ্বারাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।

৫অর্থ-আমার মহানুভব শিক্ষাগুরুদের জীবন হানি করে এই জগত্ ভোগ করার থেকে বরং ভিক্ষাকরে জীবন ধারন করা ভাল।তারা জড়জাগতিক লোভার্থী হলেও আমার গুরুজন। তাদের হত্যা করা হলে যুদ্ধলব্ধ ভোগ যে রক্ত মাখা হবে।

৬অর্থ-তাদের জয়করা ভাল না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া ভাল। তাও আমি বুজতে পারছি না।এই রনাঙ্গনে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছেধৃতরাষ্টের যে পুত্রেরা তাদের হত্যা করা হলে আমাদের আর বেচে থাকতে ইচ্ছা করবে না।

৭অর্থ-কার্পন্য জনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়েছি আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি,এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর। এখন আমি তোমার শিষ্য, সর্বত ভাবে তোমার শ্বরনাগত, দয়াকরে তুমি আমাকে শিক্ষা দাও।
৮অর্থ-আমার ইন্দ্রিয় গুলিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যে শোক তা যে কিভাবে আমি দুর করব তা আমি জানি না।স্বর্গের দেবতাদের মত আধিপত্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না।
সঞ্জয় উবাচ
৯অর্থ-সঞ্জয় বললেন এই ভাবে তার মনোভাব ব্যাক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন,হে গবিন্দ,আমি যুদ্ধ করব না ,এই বলে তিনি মৌন হলেন।
১০অর্থ-হে ভারত বংশীয় ধৃতরাষ্ট্র সে সময় স্মিত হেসে শ্রীকৃষ্ণ উভয় পক্ষেও সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদ গ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন।

১১অর্থ-ভগবান বললেন তুমি প্রজ্ঞের মত কথা বলছ অথচ যে বিষয়ে শোককরা উচিত্ নয় সে বিষয় শোক করছ। যারা যথার্থই পন্ডিত তারা কখনো জিবীত বা মৃত কারোর জন্য শোক করে না।

১২অর্থ-এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি,তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও দেহী কখনো আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না ।

১৩অর্থ-দেহী যে ভাবে কৌমার যৌবন এবং জরার মাধ্যমে দেহের রুপ পরিবর্তন করে চলে মৃত্যু কালে ঐ দেহী এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহন-রীত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পন্ডিতেরা কখনো এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হয় না ।
১৪অর্থ-হে কৌন্তয় ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্ত সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় সেগুলি যেন শীত এবং গৃস্ম ঋতুর গমনা গমনের মত। হে ভরত কুল প্রদীপ সেই ইন্দ্রিযাত অনুভূতির দ্বরা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলির সহ্য করার চেষ্টা কর।
১৫অর্থ-হে পুরুষ শ্রেষ্ট যে জ্ঞানি ব্যক্তি সুখ ও দুঃখ শীত উষ্ণ আদিদন্ধে বিচলিত হন না তিনি অমৃত তত্তের প্রকৃত অধিকারি হন।
১৬অর্থ-যারা তত্তদ্রষ্টা তারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্ত জড়বস্তুর স্থয়িত্ব নেই এবং নিত্তবস্তুর আত্মার কখন বিনাশ হয় না।তত্ত্ব দ্রষ্টাগন উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরুপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে।
১৭অর্থ-সমস্ত শরিরে পরিব্যপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা যেনেরেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
১৮অর্থ-এই সমস্ত শরির অনিত্ত কিন্তু শরীরী আত্মা অবিনাশী। সেই আত্মার অতি সুক্ষ্মত্ব হেতু অপরিমেয়। অতএব হে ভারত তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।
১৯অর্থ-যিনি জীব সত্তাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন তারা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরুপ জানেনা। কারনআত্মা কাউকে হত্মা করে না বা কারোর দ্বারা নিহত হন না।
২০অর্থ-আত্মার কখনো জন্ম হয়না বা মৃত্যু হয় না। অথবা পুনঃ পুনঃ তার উত্পত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্ত এবং নবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্ম কখনো বিনষ্ট হয় না।
২১অর্থ-হেপার্থ যিনি এই আত্মাকে অবিনাশি, নিত্য, শাশ্বত, জন্ম-রহিত ও অক্ষয় বলে জানেন তিনি ভাবে কাউকে বধ বা হত্যা করতে পারে।

২২অর্থ-মানুষ যেমন জীর্ন বস্ত্র পরিত্যাগ করে নুতন বস্ত্র পরিধান করে দেহীও তেমনই জীর্ন শরির ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারন করে।
২৩অর্থ-আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না আগুনে পোড়ান যায় না জলে ভেজান যায় না অথবা হাওয়ায় শুকানোও যায় না।
২৪অর্থ-এই আত্মা অচ্ছেদ্য অদাহ্য অক্লেদ্য এবং অশোষ্য। তিনি চিরস্থায়ি সর্ব ব্যপ্ত অপরিবর্তনীয় অচল এবং সনাতন।
২৫অর্থ-এই আত্মা অব্যক্ত অচিন্ত ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরুপ অবগত হয়ে তুমি দেহীদের প্রতি শোক পরিত্যাগ কর।
২৬অর্থ-হে মহাবাহো আর তুমি যদি মনে কর যে আত্মার বার বার জন্ম হয় বা মৃত্যু হয় তা হলেও তোমার শোক করার কোন কারন নেই।
২৭অর্থ-যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবি এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত্ নয়।
২৮অর্থ-হে ভারত সমস্ত জীব উত্পন্ন হওয়র আগে অপ্রকাশিত ছিল। তাদের স্থিতি কালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং সেজন্য শোক করার কি কারন।

২৯অর্থ-কেউ আত্মাকে আশ্চার্যবত্ দর্শন করেন,কেউ আশ্চর্য ভাবে বর্ননা করেন আবার কেউ আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবন করেন আর কেউ জেনেশুনেও বুজতে পারে না।
৩০অর্থ-হে ভারত প্রানিদের দেহে অবস্তিত আত্মা সর্বদাই অবধ্য।সেজন্য কোন প্রাণীর দেহ ত্যাগে তোমার শোক করা উচিৎ নয়।
৩১অর্থ-ক্ষত্রিয় রুপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করেও তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত্ নয়। কারন ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করা থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নাই।
৩২অর্থ-হে পার্থ স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তারা সুখী হন।
৩৩অর্থ-কিন্তু তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তা হলে তোমার স্বীয়কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে।
৩৪অর্থ-সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষে মৃত্যু অপেক্ষাও অত্যন্ত ক্ষতিকর এই অমর্যাদা।

৩৫অর্থ-সমস্ত মহারথীরা মনে করেন যে তুমি ভয়পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানিত ছিলে তারা তোমাকে তুচ্ছ তাছিল্য জ্ঞান করবে।
৩৬অর্থ-তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখকর তোমার পক্ষে কি হতে পারে।

৩৭অর্থ-হে কুন্তীপুত্র এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্‌র্গ লাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্য সুখ ভোগ করবে অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।

৩৮অর্থ-সুখ-দুঃখ লাভ ক্ষতি জয় পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে যুদ্ধ করলে তোমাকে পাপ ভোগী হতে হবে না।
৩৯অর্থ-হে পার্থ আমি তোমাকে সাংখ্য যোগের কথা বললাম এখন ভক্তি যোগ সম্বন্ধিনী বুদ্ধির কথা শ্রবন কর যার প্রভাবে তুমি কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্ত হবে।
৪০অর্থ-ভক্তি য়োগের অনুশিলন কখনো ব্যর্থ হয় না এবং তার কোন ক্ষয় নাই। তার সল্প অনুষ্ঠান ও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররুপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
৪১অর্থ-যারা এই পথ অবলম্বন করছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরু নন্দন অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহুশাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী।
৪২,৪৩অর্থ-বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের পুস্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে সর্গ সুখ ভোগ উচ্চকুলে জন্ম ক্ষমতা লাভ ইত্যাদি সকাম কর্মকেইজীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয় সুখভোগ এবংঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে তার উর্ধ্বে আর কেউ নাই।

৪৪অর্থ-যারা ভোগ ঐশ্বর্য্য সুখে আসক্ত সেই সমস্ত বিবেক বর্জিত ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাত্ ভগবানের একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।
৪৫অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুন সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন তুমি সেই গুন গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুনস্তরেঅধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।
৪৬অর্থ-ক্ষুদ্র জলাশয় যে সমসস্ত কার্য্য সাধিত হয় সে গুলি যেমন বৃহত্ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়। তেমনই ভগবানের উপসনার মাধ্যমে যিনি পরব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন তার কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য স্বাধিত হয়েছে।
৪৭অর্থ-স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্ম ফলের হেতু মনে করো না এবংকখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।

৪৮অর্থ-হে অর্জুন ফল ভোগের কামনা পরি ত্যাগ করে ভক্তি যোগস্থ্য হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্মাচরন কর। কর্মের সিদ্ধি অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমবুদ্ধি তাকেই যোগ বলা হয়।
৪৯অর্থ-হে ধনঞ্জয় বুদ্ধি যোগ দ্বারা ভক্তির অনুশিলন করে সকাম কর্ম থেকে দুরে থাক। যারা কর্মের ফল ভোগ করতে চায় তারা কৃপন।

৫০অর্থ-যিনি ভগবত্ ভক্তির অনুশিলন করেন তিনি এই জীবনেই পাপ পুন্য উভয় থেকে মুক্ত হন। সুতরাং হে অর্জুন তুমি নিস্কাম কর্ম যোগের অনুশিলন কর সেটাই হল সর্বাঙ্গিন কর্ম কৌশল।

৫১অর্থ-মনিষিগন ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের শ্বরনাগত হন। কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন।এইভাবে তারা সমস্ত দুঃখ দুর্দ্দশা থেকে মুক্ত হন।
৫২অর্থ-এইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের অর্পিত নিস্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে তোমার বুদ্ধি মোহরুপ গভীর অরন্যকে সম্পুর্নরুপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ সেই সবের প্রতি সম্পুর্ণরুপে নিরপেক্ষ্য হয়ে বিশুদ্ধ ভক্তি সাধনে প্রবৃত্ত হবে।
৫৩অর্থ-তোমার বুদ্ধি যখন বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তি যোগে অধিষ্ঠিত হবে।
অর্জুন উবাচ
৫৪অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে কেশব স্থিতপ্রজ্ঞ অর্থাত্ অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষন কী? তিনি কিভাবে কথা বলেন কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি আচরন করেন।
ভগবান উবাচঃ
৫৫অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ মানুষ যখন মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভুত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন আত্মাতেই পুর্ন পরিতৃপ্তি লাভ করে তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞা বলা হয়।
৫৬অর্থ-ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যার মন উদ্বিগ্ন হয় না,সুখ উপস্থিত হলেও যার স্পৃহা হয়না এবং যিনি অনুরাগ ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত তিনিই স্থিতধী অর্থাত্ স্থিতপ্রজ্ঞ।
৫৭অর্থ-জড় জগতে যিনি সমস্থ জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত যিনি পৃয় বস্তু লাভে আনন্দিত হয় না এবং অপৃয় বিষয় উপসতহলে দুঃখিত হন না তার চেতন পুর্ন জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৫৮অর্থ-কুর্ম যেমন তার অঙ্গসমুহ তার কঠিন বহিরাবরনের মধ্যে সংঙ্কুচিত কওে, তেমনই যে ব্যাক্তি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন তার চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।
৫৯অর্থ-দেহবিশিষ্টজীব ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ থেকে নিবৃত হতে পারে কিন্তু তবুও ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের আসক্তি থেকে যায়। কিন্তু উচ্চতর স্বাধ আস্বাদন করার ফলে সে বিষয়-তৃষ্ণা তিনি চিরতরে নিবৃত্ত হন।
৬০হে কৌন্তেয় ইন্দ্রিয় সমুহ এত বলবান এবং ক্ষোভকারি যে তারা অতি যত্নশিল বিবেক সম্পন্ন পুরুষের মনকেও বল পুর্বক ষিয়াভিমুখেআকর্ষন করে।
৬১অর্থ-যিনি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পুর্ন রুপে বশীভুত করে আমার প্রতি উত্তমা ভক্তিপরায়ন হয়ে তার ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পুর্নরুপে বশীভুত করেছেন তিনিই স্থিতিপ্রজ্ঞ।
৬২,৬৩অর্থ-ইন্দ্রিয় বিষয় চিন্তা করতে করতে মানুষের আশক্তি জন্মায় আশক্তি থেকে কামনার উদয় হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উত্পন্ন হয়। ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতি বিভ্রম, স্মৃতি বিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ হওয়র ফলে সর্বনাশ হয়। এবং মানুষ পুনরায়জড় জগতের অন্ধকুপে পতিত হয়।
৬৪অর্থ-সংযত চিত্ত মানুষ প্রিয় বস্তুতে স্বাভবিক আশক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে তার বশিভুত ইন্দ্রিয় দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশিলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করে।

৬৫অর্থ-চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তখন তার জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না এইভাবে প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি স্থির হয়।

৬৬অর্থ-যে ব্যক্তি কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত নন তার চিত্ত সংযত নয় এবং তার পরমার্থিক বুদ্ধি থাকতে পারে না। আর পরমার্থ চিন্তাশুন্য ব্যক্তির বিষয় তৃষ্ণার বিরতি নেই। এই রকম বিষয়-তৃষ্ণাক্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত সুখ কোথায়।
৬৭অর্থ-প্রতিকুল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে তেমনই সদা বিচরনকারি যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষনেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরন করতে পারে।
৬৮অর্থ-সুতরাং হে মহাবাহো যার ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে সর্ব প্রকার নিবৃত্ত হয়েছে তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।
৬৯অর্থ-সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রি স্বরুপ স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরীত থেকে আত্মবুদ্ধিনিষ্ঠআনন্দকে সাক্ষাত্ অনুভবকরেন। আর যখন সমস্ত জীবেরা জেগে থাকে স্থিতপ্রজ্ঞা ব্যক্তির কাছে তা রাত্রি স্বরুপ।
৭০অর্থ-বিষয় কামি ব্যক্তি কখনো শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সদা পরিপুর্ন সমুদ্রে প্রবেশ করেও তাকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমুহও তেমন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে প্রবিষ্ট হয়েও তাকে বিক্ষুব্ধ করতে পারেনা অতএব তিনিই শান্তি লাভকরে,
৭১অর্থ-যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিঃস্পৃহ হয়ে নিঃরহঙ্কার এবং মমত্ত্ব বোধ রহিত হয়ে বিচরন করেন তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করে।
৭২অর্থ-এই প্রকার স্থিতিকেই ব্রহ্মস্থিতি বলে। হেপার্থ যিনি এই স্থিতি লাভ করেন তিনিমোহ প্রাপ্ত হন না ।জীবনের অন্তিম সময়তিনি এইজড় জগতের বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করেন।

ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাংযোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদেসাংখ্যযোগো নাম দ্বিতীযোঽধ্যাযঃ

প্রথম অধ্যায়ঃ- অর্জুনবিষাদ যোগ (বাংলা অনুবাদ)



০১.অর্জুন বিষাদযোগ [ বাংলা অনুবাদ ]

ধৃতরাষ্ট উবাচ
১অর্থ-ধৃতরাষ্ট জিজ্ঞাসা করলেন হে সঞ্জয় ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্ররা তারপর কি করলেন।
সঞ্জয় উবাচ
২অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে রাজন পান্ডবদের সৈন্য সজ্জা দর্শন করে রাজা দুর্য্যধন দ্রোনাচার্য্যেরকাছে বললেন।
৩অর্থ-হে আচার্য্য পান্ডবদের মহান সৈন্য দল দর্শন করুন যা আপনার অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিষ্য দ্রুপদের পুত্র অত্যনত দক্ষতার সংঙ্গে ব্যুহের আকার রচনা করেন।
৪অর্থ-সে সমস্থ সেনাদের মধ্যে অনেকে ভীম এবং অর্জুনের মত বীর ধনুর্ধারী রয়েছেন এবং যুযুধান বিরাট ও দ্রুপদের মত মহাযোদ্ধা রয়েছেন।

৫অর্থ-সেখানে ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশিরাজ পুরুজিত্ কুন্তিভোজ এবং শৈব্যের মত অত্যন্ত বলবান যোদ্ধারাও রয়েছেন।
৬অর্থ-সেখানে রয়েছেন অত্যন্ত বলবান যুধামন্যু প্রবল পরাক্রামশালী উত্তমৌজ,শুভদ্রার পুত্র এবং দ্রৌপদীর পুত্রগন এই সব যোদ্ধারা সকলেই এক একজন মহারথী।
৭অর্থ-হে দ্বিজত্তম আমাদের পক্ষে যে সমস্ত বিশিষ্ট সেনাপতি সামরিক শক্তি পরি চালনার জন্য রয়েছেন আপনার অবগতীর জন্য আমি তাদের সম্বন্ধে বলছি।
৮অর্থ-সেখানে রয়েছেন আপনার মতোই ব্যক্তিসম্পন্ন-ভীষ্ম কর্ন কৃপ অশ্বত্থমা বিকর্ন এবং সোমদত্তের পুত্র ভূরিশ্রবা যারা সর্বক্ষেত্রে সর্বদা সংগ্রামে বিজয়ী থাকেন।
৯অর্থ-এছারা আর বহু নায়ক রয়েছেন আমাদের জন্য তাদের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত । তারা সকলেই নানা প্রকার অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত এবং তারা সামরিক বিজ্ঞান বিশারদ।
১০অর্থ-আমাদের সৈন্যদল অপরিমিত এবং আমরা পিতামহ ভীষ্মের দ্বারা পুর্নরুপে সুরক্ষিত কিন্তু ভীমের দ্বারা সতর্ক ভাবে সুরক্ষিত পান্ডবের শক্তি সিমিত।
১১অর্থ-এখন আপনারা সকলে নিজ নিজ গুরুত্তপুর্ন স্থানে সমর সেনাসজ্জায় স্থিত হয়ে পিতামহ ভীষ্মকে পুর্ন সাহয্য করুন।
১২অর্থ-তখন কুরু বংশের বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্য্যধনের হর্ষ উত্পাদনের জন্য সিংহের গর্জ্জনের মত অতি উচ্চনাদে তার শঙ্খ বাজালেন।
১৩অর্থ-তারপর শঙ্খ ভেরী পনক আনক ঢাক এবং গোমুখ সিংঙ্গা সমুহ হঠাত্ একত্রে ধনিত হয়ে এক তুমুল শব্দের সৃষ্টি হল।
১৪অর্থ-অন্যদিকে শ্বেত অশ্বসমুহ যুক্ত একদিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন উভয়ে তাদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন।
১৫অর্থ-তখন শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য নামক তার শঙ্খ বাজালেন।এবং অর্জুন বাজালেন তার দেবদত্তক নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজন পৃয় ভীমকর্মা সেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তার ভয়ঙ্কর শঙ্খ।

১৬,১৭,১৮অর্থ-কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্ত বিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন, এবং নকুল এবং সহদেব বাজালেন সুঘোষ এবং মনিপুস্পক নামকশঙ্খ। হে মহারাজ তখন মহান ধনুর্ধর কাশিরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডি,ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট এবং অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ দ্রৌপদীর পুত্রগন, সুভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন।
১৯অর্থ-শঙ্খ নিনাদের সেই শব্দে আকাশ বিদীর্ন হল। পৃথিবী কম্পিত হল এবং তার ফলে ধৃতরাষ্টের হৃদয় প্রবল ভয়ে বিধ্বস্ত হল।
২০অর্থ-সেই সময় পান্ডু পুত্র অরজুন হনুমান চিহ্নিত পতকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে তার ধনুক তুলেনিয়ে শ্বরনিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সমর সজ্জায় বিন্স্ত দেখে হৃষীকেশকে অর্জুন তখন এই কথাগুলি বললেন অর্জুন উবাচ
২১,২২অর্থ-অর্জুন বললেন হে অচ্যুত্ অভ্রান্ত বন্ধু, তুমি উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে আমার রথ স্থাপন কর, যাতে আমি দেখতে পারি যুদ্ধ করার অভিলাষি হয়ে কারা এখানে এসেছে এবং আমাকে অস্ত্রধারন করে কাদের সঙ্গে এই মহা সংগ্রাম করতে হবে।
২৩অর্থ-অমি দেখতে চাই ধৃতরাষ্টের দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন পুত্রদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কারা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে।সঞ্জয় উবাচ
২৪অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে ভারত বংশধর অর্জুন কতৃক এইভাবে আদিষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণ সেই উত্তম রথটি চালিয়ে নিয়ে উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাখলেন।
২৫অর্থ-ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখ পৃথিবীর অন্য সমস্থ নেতাদের সামনে ভগবান হৃষীকেশ বললেন হে পর্থ এখন সমস্ত কৌরবদের দেখ।
২৬অর্থ-তখন অর্জুন উভয়ে দলের মধ্যে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য মাতুল ভ্রাতা শ্বশুর মিত্র শুভকাঙ্খিদের উপস্থিত দেখতে পেলেন।
২৭অর্থ-যখন অর্জুন সকল রকমের বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত দেখলেন তখন তিনি অত্যন্ত কৃপায়াবিষ্ট ও বিষন্ন হয়ে বললেন।
অর্জুন উবাচ
২৮অর্থ-অর্জুন বলিলেন হে প্রিয়বর কৃষ্ণ আমার সমস্ত বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের এমন ভাবে যুদ্ধাভিলাষি হয়ে আমার সামনে অবস্থান করতে দেখে আমার অঙ্গ প্রতঙ্গ অবশ হয়ে আসছে এবং মুখ শুস্কহয়ে উঠছে।
২৯অর্থ-আমার সর্ব শরির কম্পিত ও কেশাগ্র রোমাচিত হচ্ছে। হাত থেকে গান্ডিব খসে পরছে এবং ত্বক যেন জ্বলে যচ্ছে।
৩০অর্থ-হে কেশব আমি এখন স্থির থাকতে পারছি না। আমি বিভ্রান্তী বোধ করছি,আমার চিত্ত উত্ভ্রান্ত হচ্ছে। হে কেশীদৈত্যহন্তা শ্রীকৃষ্ণ আমি কেবলই অমঙ্গ সুচক লক্ষন দর্শন করছি।
৩১অর্থ-হে কৃষ্ণ আত্মীয় স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাইনা রাজ্যসুখ ভোগের কামনা করিনা।

৩২,৩৩,৩৪অর্থ-হে গবিন্দ আমাদের রাজ্যে কি প্রায়োজন, আর সুখভোগ বা জীবন ধারনেই বা কী প্রোয়োজন, যখন দেখছি যাদের জন্য রাজ্য ও ভোগসুখের কামনা, তারা সকলেই এই রণক্ষেত্রে উপস্থিত? হেমধুসুদন যখন আচার্য্য পিত্রিব্য পুত্র, মাতুল শ্বশুর পৌত্র শ্যালক আত্মীয়স্বজন ,প্রান ও ধনাদির আশা পরিত্যাগ করে আমার সামনে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছে, তখন তারা আমাকে বধ করলেও আমি তাদের হত্যা করতে চাইব কেন? হে সর্বজীবসত্তার প্রতিপলক জনার্দন, পৃথিবীর তো কথাই নাই এমন কি ত্রিভুবনের বিনিময়েও আমি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই। ধৃতরাষ্টের পুত্রদের নিধন করে কি সন্তোষ আমরা লাভ করতে পারব?

৩৬অর্থ-এই ধরনের আততায়িদের বধ করলে মহাপাপ আমাদের আচ্ছন্ন করবে। সুতরাং ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সংহার করা আমাদের উচিত্ হবে না। হে শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্মীপতি মাধব আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে কিলাভ হবে।এবং তা থেকে কেমন করে আমরা সুখী হব।
৩৭,৩৮অর্থ-হে জনার্দন যদিও এরা রাজ্যলোভে অভিভুত হয়ে কুলক্ষয় জনিত দোষ ও মিত্রদোহ নিমিত্ত পাপ লক্ষ করছে না, কিন্তু আমরা কুলক্ষয় জনিত দোষ লক্ষ্য করেও এই পাপ কাজে কেন প্রবৃত্ত হব।
৩৯অর্থ-কুলক্ষয় হলে সনাতন কুলধর্ম বিনষ্ট হবে এবং তা হলে সমগ্র বংশ অধর্মে অভিভুত হবে।
৪০অর্থ-হে কৃষ্ণ অধর্মের দ্বারা অভিভুত হলে কুলবধুগন ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং হে বাষ্ণেয় কুলস্ত্রীগন অসত্ চরিত্রা হলে অবাঞ্চিত প্রজাতি উত্পন্ন হয়।
৪১অর্থ-অবাষ্ণিত বর্ন সঙ্কর সন্তান উত্পাদন বৃদ্ধি হলে কুল ও কুলঘাতকেরা নরকগামী হয়। সেই কুলে পিন্ডদান ও তর্পনক্রিয়া লোপপওয়ার ফলে তাদের পিতৃ পুরুষরাও নরকে অধঃপাতিত হয়।
৪২অর্থ-যারা বংশের ঐতিয্য নষ্ট করে এবং তার ফলে অবাষ্ণিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে,তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং বংশের কল্যানধর্ম উত্সন্নে যায়। ফলে সনাতন জাতিধর্ম ও কুলধর্মও বিনষ্ট হয়।
৪৩অর্থ-হে জনার্দন যাদের কুলধর্ম নষ্ট হয়েছে তাদের নিয়ত নরকে বাস করতে হয়, আমি পরস্পরাক্রমে শুনেছি।
৪৪অর্থ-হায়! কী দঃখের বিষয় যে রাজ্য সুখের লাভের আশায় স্বজনদের হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মহাপাপে প্রবৃত্ত হইতেছি।
৪৫অর্থ-প্রতিরোধ রহিত ও নিরস্ত্র অবস্থায় আমাকে যদি শস্ত্রধারী ধৃতরাষ্টের পুত্রেরা যুদ্ধে বধ করে তাহা হলে আমার অধিকতর মঙ্গল হবে।
সঞ্জয় উবাচ
৪৬অর্থ-সঞ্জয় বললেন রনক্ষেত্রে এই কথা বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন। বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন।

ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাংযোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদেঅর্জুনবিষাদযোগোনাম প্রথমোঽধ্যাযঃ ॥১॥